ঢাকা: যুদ্ধাপরাধের দায়ে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি থাকা সত্ত্বেও দলটিকে সমাবেশ করতে সরকারের অনুমতি দেওয়া সঠিক হয়নি বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের নেতারা। জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দেশের জন্য অশুভ সংকেত বলেঅভিযোগ করছেন জোট নেতারা।
অনুমতি না পেয়ে দীর্ঘ ১০ বছর সভা, সমাবেশ করতে না পারা জামায়াতে ইসলামীকে হঠাৎ করে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া কীসের আলামত-সরকারকে উদ্দেশ্য করে এমন প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ দলের কোনো কোনো নেতা। এটাকে রাজনৈতিক কৌশল বলা হলে এই কৌশল সঠিক নয় বলেও তারা মনে করছেন। এ ঘটনাকে সাপের মুখে চুমু খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন ওই নেতারা।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মহান মুক্তিযু্েদ্ধর সময় মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলকালে জ্বালাও, পোড়াও, বোমাবাজি সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন ঘটনার অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতকে প্রকাশ্যে সভা, সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি সরকার। স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতকে নিষিদ্ধের যে দাবি জানিয়ে আসছে ওই সময় তা আরও জোরালো হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধ বাতিল হওয়ায় গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১০ জুন ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে জামায়াত সমাবেশ করে। এ সমাবেশের অনুমতিকে ১৪ দলের কোনো কোনো নেতা তোষামোদ ও সমঝোতা বলেও অভিযোগ করছেন।
এ ঘটনার পর গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই দেখলাম জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন। সেই জামায়াতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, ১০ বছর পর তাদের প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কীসের আলামত আমরা জানি না। জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে একথা বলেছে। এর জন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নেই। সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে।
১৪ দলের নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি করা হচ্ছে এবং সংক্রান্ত আদালতের রায়ও রয়েছে। ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে। যে কারণে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে সে কারণেই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা করা হয়নি, উল্টো এখন সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করছে. ১৪ দল. আওয়ামী লীগও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি করে আসছে। সেখান থেকে সরে এসে ওই দলটিকে সমাবেশ করতে দেওয়া ভাল লক্ষণ নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে কিন্তু সেটা সরকার করতে পারেনি অথচ সমাবেশ করার অনুমতি দিল। জামায়াত যেহেতু নিষিদ্ধ নয় তাই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদি এটা বলা হয় তাহলে এটা ভালো লক্ষণ নয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা হাসানুল হক ইনু বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতের যে কোনো তৎপরতা চালাতে দেওয়াকে আমি সঠিক মনে করি না। জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া দেশের জন্য অশুভ সংকেত। এ ধরনের অনুমতি দেওয়া ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে ১৪ দলের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ১৪ দল জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি করে আসছি. আওয়ামী লীগও এ দাবি করে। সেই অবস্থানে না থেকে নীতিগত তো নয়ই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও কোনোভাবেই জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া ঠিক হয়নি। যদি কৌশলগত বলা হয় তাহলে বলব এই ধরনের কৌশল বন্ধ হওয়া দরকার। এমন রাজনৈতিক কৌশল ভাল না। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে রাজনীতি করতে দেওয়া ভালো কৌশল নয়। দেশের মঙ্গল চাইলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে আদালতের রায় আছে। সরকার সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যে গ্রাউন্ডে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে সেই গ্রাউন্ডেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসকে/এমএমজেড