ঢাকা: মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিএনপি বিশৃঙ্খলা করতে পারে বলে- এমন আশঙ্কা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সেই শঙ্কা থেকেই যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রতিহত করতে দলটির সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলো সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখছে।
স্থান নিয়ে বিভিন্ন জটিলতার পর ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। ডিএমপির অনুমতিও মিলেছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এদিন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ রাজধানীতে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে। বুধবার রাতে সমাবেশ পেছানোর কথা জানায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ গত বছর নভেম্বরে আগাঁরগাওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়, যেদিন বিএনপির সমাবেশসহ সরকার বিরোধী কর্মসূচি থাকবে, সেদিন আওয়ামী লীগও সমাবেশসহ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে। কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা বারবারই বলে আসছেন, কর্মসূচির নামে বিএনপি ফাঁকা মাঠ পেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এজন্যই যেকোনো বিশৃঙ্খলা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগও মাঠে থাকছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৮ জুলাইয়ের কর্মসূচি আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের।
রাজধানীতে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই সহিংসতার আশঙ্কা ছড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেও এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিএনপি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যেই অভিযোগ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৫ জুলাই এক সভায় বলেন, খবর পাচ্ছি, সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র কিনছে তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ তাদের অস্ত্র সরবরাহের একটি ঘাঁটি। আগ্নেয়াস্ত্র এনে তারা মজুত করছে। তারা মনে করে অস্ত্র শক্তি হলো আসল শক্তি। যারা অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় আসে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকার কথা নয়।
তিনি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, চোখ-কান খোলা রাখুন। সতর্ক থাকতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত। বিএনপি সংঘাত চায়। মাঠে সতর্ক থাকব, সংঘাত যারা করতে আসবে তাদের প্রতিহত করব। তারা খালি মাঠ পেলে সংঘাত করবে। সেই প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যাপক জমায়েত নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। দলের থানা, ওয়ার্ডসহ প্রতিটি এলাকার নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির জনসমাগম শুধু শক্তি ও জনসমর্থন দেখানোর চেষ্টা নয়, বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টাও- এমনটি মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি সারা দেশ থেকে আনা নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বা স্থানে অথবা এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য কোনো স্থাপনার ওপর হামলা, ভাঙচুর বা সন্ত্রাসী তৎপরতা, সহিসংতার চেষ্টা করতে পারে।
নেতারা বলছেন, বিএনপি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে যাতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে জন্যই আওয়ামী লীগের এ জমায়েত। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যাপকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ভূমিকা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের এ রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।
যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্র লীগের এই যৌথ শান্তি সমাবেশ ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ে করার কথা আগে বলা হলেও এখন জানা গেছে, সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তিন সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বিএনপি দেশ ধ্বংসকারী দল, দেশের ষড়যন্ত্রকারী দল। শুক্রবার সারা বাংলাদেশ থেকে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নন, সাধারণ লোকজনও এ সমাবেশে উপস্থিত হবেন। আগামীকাল কত লোক হবে তার হিসাব মেলাতে পারবেন না, লোকে লোকারণ্য হবে। জনতার ঢল নামবে ঢাকায়।
আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই তিন সংগঠনের সমাবেশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও জমায়েত দিয়ে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জমায়েত দিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রস্তুতি নিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকার দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জমায়েত দিতেও বলা হয়েছে।
শুক্রবারের সমাবেশের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তিন সংগঠন সমাবেশ করবে, আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবেন।
প্রস্তুতি সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। সব থানা-ওয়ার্ড কমিটিতে নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আমাদের টার্গেট পাঁচ লাখ লোকের সমাগম ঘটানো। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে তিন সংগঠনের সমাবেশে আমাদের জমায়েত তো থাকবেই তা ছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
এসকে/আরএইচ