ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই: মেনন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই: মেনন ফাইল ফটো

ঢাকা: বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, নির্বাচন হবে সংবিধানের অধীনে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকার আবার বিজয়ী হবে, এটি আমি বিশ্বাস করি।

 

শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় ১৪ দলীয় জোট আয়োজিত গণতন্ত্র-উন্নয়ন ও সাংবিধানিক শাসন বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, যদি আপনারা (বিএনপি-জামায়াত) নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অগণতান্ত্রিক অনিয়ন্তান্ত্রিক উপায়ে সরকার পতন করতে ষড়যন্ত্র করেন এবং রাস্তায় সহিংসতা করেন, তাহলে ২০১৪ সালে আমরা যেভাবে জবাব দিয়েছিলাম বিএনপি জামায়াতের সেই ষড়যন্ত্রকে, আরেকবার জবাব দিব। তখন বুঝবেন, এ বাংলাদেশে আপনাদের জায়গা নেই।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে নাকি বিএনপি নির্বাচন করবে। আমি খুব সুস্পষ্ট ভাষায় একটি কথা বলতে চাই, সরকার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন, এ দাবি তো নতুন নয়। আমরাও এরশাদের আমলের সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করেছিলাম। আবার যখন ৯১ সালের পরে বিএনপি জামায়াত ও সহযোগীরা মাগুরার উপনির্বাচনে ভোট কেন্দ্র থেকে ভোট চুরির ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। আমরা তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিলাম। এটা সত্য।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো জননেত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। তখন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত প্রশাসনের রদবদল করেছিল। ওই গণভবনে শেখ হাসিনা ফিরে যেতে না যেতেই, বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আমরা দেখেছিলাম একই ভাবে ২০০৬ সালের ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দীর্ঘ দুই বছরের সামরিক শাসনের কারণে আমরা ২০ বছরের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পথে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা ফিরে এসেছি। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়েছি।

রাশেদ খান মেমন বলেন, ২০০৬ সালের বাংলাদেশ, ২০২৩ সালের বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। যে বাংলাদেশ তলাহীন ঝুড়ির দেশ বলে উপহাসের পাত্র ছিল। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হয়েছে। যে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ, মন্দা মহামারির চিত্রই পৃথিবীর মানুষ জানতো, আজকে কোভিডের মতো অতিমারের সময়েরকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোভিডকে মোকাবিলা করে উন্নয়নের চাকাকে অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, আজকে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে সমস্ত বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ডলারের দাম বেড়ে গেছে, জ্বালানি সংকট শুরু হয়েছে, খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে, তখনও বাংলাদেশ এসব সংকট মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে।

তবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কোনো সন্দেহ নেই, জ্বালানি সংকট হয়েছে কোনো সন্দেহ নেই। বাজারে আগুন কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার মধ্যেও আজকে সামাজিক নিরাপত্তার বলায় বৃদ্ধি করে ওই গরিব মানুষের জন্য ৩০ কেজি চালের ব্যবস্থা করে টিসিবির মাধ্যমে জিনিসপত্র সরবরাহ করে এ সরকার আমাদের জন্য অনেকখানি সহনীয় করেছেন।

কিন্তু আমাদের আফসোস, এ পরিস্থিতির মধ্যেও যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ওই ষড়যন্ত্রকারীরা একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে।

রাশেদ খান মেমন বলেন, দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবিলা করতে পারি। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র যখন বিদেশি শাসকগোষ্ঠী যুক্ত হয়ে যায়, তখন আমার দেশের মধ্যে অনিশ্চয়তা নেমে আসে। আজকে আমরা লক্ষ্য করে দেখি- বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। আমরা দেখি, ইউরোপের পর্যবেক্ষক দল তাদের পর্যবেক্ষক প্রেরণ করবেন কি করবেন না তার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দলের সঙ্গে বৈঠক করছে। আমরা দেখি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা চিঠির পর চিঠি লিখছে। তাদের বক্তব্য বাংলাদেশে নাকি মানবাধিকার নেই। বাংলাদেশে নাকি গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। বাংলাদেশ নাকি শ্রমের অধিকার নেই।

তিনি বলেন, আমি আজকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা আমাদের র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, কেন- তারা বিচারবহির্ভূত হত্যা করে, তারা নাকি অপহরণ গুমের সঙ্গে জড়িত। আমি যদি প্রশ্ন করি দুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল, তার বিচার তো দূরের কথা, তাকে সরাসরি গুলি করে আপনারা হত্যা করেছেন। আপনি যখন হত্যা করেন তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না। আপনি যখন কালো মানুষকে রাস্তা ফেলে রেখে জীবন নিয়ে নেন তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না। বাংলাদেশে যখন আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই, যখন হোলিআরটিজেনের মতো জঙ্গিদের দমন করি তখন আপনাদের অসুবিধে হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বিএনপির লক্ষ্য নির্বাচন নয়। আজকে তারা সব দক্ষিণপন্থী শক্তিকে এক করেছে। তাদের (দক্ষিণপন্থী শক্তি) লক্ষ্য শেখ হাসিনার সরকার। তারা শেখ হাসিনার সরকার তাদের পছন্দ না। কারণ শেখ হাসিনার সরকার তাদের দেশ দেয়নি। শেখ হাসিনার সরকার তাদের বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি করতে দেবে না। শেখ হাসিনা সরকার তাদের হুকুম মাফিক পারমানবিক শক্তি চালাবে না।

সম্প্রতি পাকিস্তানের ইমরান খানের সরকারের পরিবর্তন হয়ে গেল, সেই সরকারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা করেছেন। এক মাসের মাথায় তারা পাকিস্তানের ইমরান খানের সরকারকে পাল্টে দিয়েছে। সামরিক বাহিনীকে তারা পিছন দিক থেকে ইন্দন দিয়ে ব্যবহার করেছে। আমাদের দেশেও তাদের লক্ষ্য ছিল, এখনো লক্ষ্য আছে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানো এবং তাদের ইচ্ছে মাফিক তাবেদার সরকার গঠন করা।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের বলে দিতে চাই, এ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ সপ্তম নৌবহরকে পরোয়া করেনি। এ বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পরোয়া করেনি। আজকেও আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে অথবা অন্য কোনো উপায়ে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন একথা ভুলে যান। এটি বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ।  

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশ শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।

এছাড়াও আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য মো. হাবীব হাসান,   জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ শিরীন আক্তার, ১৪ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টির (জেপি) সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী, ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মিনাল কান্তি দাস ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।