সিরাজগঞ্জ: তিন শতাধিক মামলার ভারে জর্জরিত সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি। ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে মামলায় পড়েছেন দলটির শীর্ষ নেতাসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
বর্তমানে ৩১৯টি মামলা ঝুলছে বিএনপির ঘাড়ে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চুর নামেই রয়েছে সর্বোচ্চ ৬৪টি মামলা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা রয়েছে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান লেবুর নামে- ৫৫টি, সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও ভিপি অমর কৃষ্ণ দাসের নামে ৫০টি করে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জনের নামে ৫০টি, ভিপি শামীম খানের নামে ৪০, মুন্সী জাহেদ আলমের নামে ৩৫টি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ সুইটের নামে ৫০টি, মির্জা মোস্তফা জামানের নামে রয়েছে ২০টি মামলা।
এছাড়া জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবুর নামে ৫৫টি, সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদের নামে ৪০টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন রাজেশের নামে ৫০টি, বর্তমান আহ্বায়কের নামে রয়েছে ৩০টি মামলা, ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সিরাজের প্রত্যেকের নামে ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে।
এছাড়া দলের প্রায় কয়েক ডজন শীর্ষ নেতার নামে ২০ থেকে ৩০টি করে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় নিম্ন ও উচ্চ আদালত, রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রতিনিয়ত হাজিরা দিতে হচ্ছে দলটির নেতাদের।
১৩ বছরে চার বার জেল খেটেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন।
এছাড়া অধিকাংশ নেতাই একাধিকবার জেলে খেটেছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নাশকতার একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে আবু সাঈদ সুইট, আলীম, সবুজ আলমগীর হোসেন আলম ও লুৎফর হোসেন ভুইয়ার।
মামলা ও হুলিয়া উপেক্ষা করেই কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করছে জেলা বিএনপি। প্রতিটি কর্মসূচিতে নিজে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করছেন সাইদুর রহমান বাচ্চু। তৃণমূলেও প্রতিটি এলাকায় গিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলছেন তিনি।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০১০ সাল থেকে শুরু হয় বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনে কখনো কখনো পুলিশ বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পাইকপাড়া এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও মোটরসাইকেল পোড়ানোর অভিযোগে দলটির ৫০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। প্রতিটি ঘটনার মামলায় আসামি করা হয় সাইদুর রহমান বাচ্চুকে।
বিএনপির আইনজীবী ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম নাজমুল ইসলাম বলেন, জেলা সদরসহ সারা জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা কোনো না কোনো মামলার আসামি। রাজনৈতিক মামলাগুলো বিচারাধীন থাকায় নেতাকর্মীদের প্রতিদিনই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক তানভীর মাহমুদ পলাশ জানান, সদর থানায় মোট ৬৪টি মামলায় জ্ঞাত অজ্ঞাত দুই লাখ ৫৪ হাজার আসামি রয়েছেন। পুরো জেলায় ৩১৯টি মামলায় রয়েছে প্রায় ১০ লাখ আসামি। মোট প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যাতন সয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের ওপর তিন দফায় হামলা হয়েছে। ডজন ডজন মামলা মাথায় নিয়ে প্রতিদিনই আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে হচ্ছে আমাদের। বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নির্দেশে ও জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদের পরামর্শে সরকারি বাহিনীর নানা বাধা উপেক্ষা করে প্রতিটি কর্মসূচি আমরা পালন করেছি। ১ সেপ্টেম্বর দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও আমরা পালন করব। এ উপলক্ষে দলীয় পতাকা উত্তোলন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিকেলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এসআই