বরিশাল: সড়কে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও শ্রমিক লীগ নেতার পিস্তল নিয়ে ধস্তাধস্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বরিশালের রাজনীতির অঙ্গনে।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর এবার সংবাদ সম্মেলন করছে উভয় পক্ষ।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৪টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের একই হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের বরিশাল মহানগরের নেতারা। তারা সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় শ্রমিক লীগ বরিশাল মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক বেল্লাল হোসেন শিশির বলেন, রোববার পোর্টরোড ভূমি অফিসের সম্মুখে ৮০ থেকে ৯০ দশকের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, এক সময়ের ক্রস ফায়ারের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, বহু মামলার আসামি মুরতজা আবেদীন পরিকল্পিতভাবে আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যাচেষ্টার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা প্রতিহত করে এবং মুরতজা আবেদীনকে পিস্তলসহ পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনাটি অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য মুরতজা আবেদীন প্রশাসন, সংবাদ মাধ্যমসহ অন্যান্য মহলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য দিয়ে বরিশালবাসীসহ সব রাজনৈতিক মহলে ধোয়াশা তৈরি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
তিনি বলেন, মুরতজা আবেদীন গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালীন রইজ আহম্মেদ মান্নাসহ তার মা বোন এবং তিন ভাই প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করান। এরপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি মিথ্যা তথ্য সম্বলিত অডিও রেকর্ড প্রচার করেন যা আপনারা অবগত আছেন। মূলত ধারাবাহিকভাবে বরিশাল পৌরসভা থেকে শুরু করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদসহ সর্বমোট পাঁচবারের কাউন্সিলর থাকার পরে গত ১২ জুন নির্বাচনে সম্পূর্ণ নতুন মুখ রইজ আহম্মেদ মান্নার বড় ভাই মুন্নার কাছে পরাজয়ের বেদনা তাকে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষে পরিণত করেছে।
তিনি আরও বলেন, উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা খতিয়ে দেখবেন ঘটনার দিন কি কারণে মুরতজা আবেদীনের বুক পকেটে মোবাইল ফোন ছিল? কি কারণেই বা মোবাইল ফোনের ভিডিও অন করা ছিল? কি কারণে তিনি রইজ আহম্মেদ মান্নাকে উত্ত্যক্ত করেছিলেন? এবং বারে বারে ‘আমাকে মারবি তাহলে মার’ বলে আহ্বান জানাচ্ছিলেন? সুতরাং এসব ঘটনা মুরতজা সাহেবের প্রত্যাশিত সাজানো নাটক ছিল যা উনি ঘটনাস্থলে অভিনয় করে গেছেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রকৃত ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সেসঙ্গে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
যদিও এসব অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে অ্যাডভোকেট মুরতজা আবেদীন বলে আসছেন, তার লাইসেন্স করা পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মান্না ও তার সহযোগীরা। আর সেসঙ্গে তিনিও তার করা ভিডিও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও পর্যালোচনা করার দাবি জানিয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, সদস্য অ্যাডভোটেক রফিকুল ইসলাম খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহুমদ বাবু, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার রাজিব প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মুরতজা আবেদীন। গত সিটি নির্বাচনে তার এ ওয়ার্ডে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তৎকালীন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্না। তবে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর, হুমকি-ধামকি দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় কারাগারে থাকতে হয় তাকে, সেসঙ্গে হারাতে হয় মহানগর ছাত্রলীগের পদটিও।
এদিকে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করলে মান্নার ভাই মুন্না হাওলাদার সেই নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং মুরতজা আবেদীনকে হারিয়ে বিজয়ী হন। আর ওই নির্বাচন থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩
এমএস/আরআইএস