ঢাকা: জনগণের আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের অংশগ্রহণমূলক কারচুপি মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপে সরকারের অবস্থা শোচনীয়। নিশ্চিত পরাজয় এবং পতনের পরে জনগণের সামনে তাদের দুঃশাসন ও লুটপাটের জবাবদিহিতার ভয়ে অনির্বাচিত অবৈধভাবে প্রতিনিধিত্বকারী সরকারি দলের নেতাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীতে গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা।
তারা আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগের পতন সন্নিকটে এবং জনগণ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। আতঙ্কে সরকার ও সরকারি দলের নেতারা দিশেহারা। কেউ কেউ পাগলের প্রলাপ বকছেন বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা ক্ষমতাসীন সরকারকে অবিলম্বে জনগণের একদফা দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল জাতীয় সংসদ পাস করার আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সরকারের পদত্যাগ ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে ১২ দলীয় জোটের গণমিছিল পূর্ব এ সমাবেশ হয়।
সমাবেশ শেষে মিছিলে নেতৃত্ব দেন ১২দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। মিছিলটি বিজয়নগর পানির ট্যাংকি, কাকরাইল মোড় ঘুরে ফের পানির ট্যাংকির সামনে গিয়ে শেষ হয়।
১২ দলীয় জোট প্রধান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটুর পরিচালনায় মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক দলের (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, ইসলামিক ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা শওকত আমিন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদ খান, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির সাধারণ সম্পাদক মানসুর আলম শিকদার, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, যুগ্ম মহাসচিব এ এস এম শামীম, বাংলাদেশ এলডিপির সৈয়দ ইবরাহিম রওনক, এম এ বাশার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। এ দাবিতে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আজকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে দিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আমাদেরক সতর্ক থাকতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি জাতীয় সংসদে আইনের মাধ্যমে পাস করতে হবে।
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, এ সরকারের পতন চাই। দেশে চলছে গুন্ডাতন্ত্র। দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার নেই। যার প্রমাণ সরকারের একজন বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় চেয়েছে। তবে জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারের পতন ঘটাবে।
জাতীয় পার্টির আহসান হাবিব লিংকন বলেন, আজকে দেশের মানুষ এ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী আপনি পদত্যাগ করে বিদায় নিন এবং জনগণকে মুক্তি দিন।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘব না করে শুধু ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে ব্যস্ত হয়েছেন। আপনি দ্রুত পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
অন্যান্য নেতারা বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলি বিরোধী রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলন অত্যন্ত সফল সুন্দর সার্থক শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলিতভাবে অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষে নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি দলের ক্যাডারদের হামলা মামলা গ্রেপ্তার অভিযান এবং নানাভাবে হয়রানি উপেক্ষা করে ধৈর্যের সঙ্গে বিরোধী দল নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের শৃঙ্খলা দেখে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আন্দোলনকে দুর্বল ও দাবি আদায়ে অক্ষম বলে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, সরকার লাখ লাখ মানুষের রাজপথের আন্দোলনকে অগ্রাহ্য করে জনগণকে গণ অভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দাবি না মানলে এই মাসের মধ্যে আন্দোলনকে শক্তিশালী ও সর্বব্যাপী করে তোলা হবে। দেশের মানুষ রুখে দাঁড়ালে সরকার পালবার পথ খুঁজে পাবে না। নিজেদের আচরণ ও গণবিদ্বেষী ভূমিকা পালন করে নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তাকে সংকুচিত করে ফেলছে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়।
নেতারা বলেন, এতদিন বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানালেও এখন বহির্বিশ্বের কাছেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধিতে এসেছে। সবাই বুঝে গেছে এ সরকারের অধীনে নির্বাচন মানেই আরেকটি ভোট চুরির মহোৎসবের সুযোগ প্রদান করা।
নেতারা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনূসকে হয়রানির নিন্দা জানিয়ে বলেন, হীন উদ্দেশে মামলার আসামি করে বিচারের ফাঁদে ফেলে একদিকে ব্যক্তি ইউনুসের উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন থেকে জনগণ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
টিএ/জেএইচ