ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তোলা সেলফি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, সেলফির জন্য পেছন পেছন ঘোরাঘুরি ছেলেপুলে, যুবক-যুবতীরা করে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে জিয়া প্রজন্ম দলের উদ্যোগে নিরপেক্ষ নির্বাচন এক দফা দাবী শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদু বলেন, একটা সেলফির জন্য পেছনে পেছনে ঘোরা; মানে ছেলেপুলেরা, যুবক-যুবতীরা যা করে। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেওয়া ও প্রকাশ করা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে? এটা নিয়ে তার সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন বিএনপি নাকি কষ্ট পাচ্ছে! এগুলো নিয়ে কেউ কেউ তার সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। এই দেশের জন্য লাখ লাখ দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। সেই দেশের একজন রাষ্ট্রপ্রধান একটি সেলফি তুলে বলছে সব ঠিক আছে। বিএনপি পশ্চাৎ অবলম্বন করেছে। এই ধরনের কথাবার্তা মানে- সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার প্রধান আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সাথে পাশাপাশি বসবেন। দুই দেশের পতাকা থাকবে তাহলে তো বোঝা যাবে? যেভাবে নরেন্দ্র মোদির সাথে বসেছে। কিন্তু মোদির সাথে বসে কোনো লাভ হয়নি। তারপরে বসেছে তো। ওই ধরনের একটা ছবি দিতেন। সেলফি তুলবেন কেন? এরকম ইয়ার্কি মারা রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি এর আগে এ দেশবাসী দেখেনি। এটা দেশকে, দেশের মানুষকে ছোট করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে দুদু বলেন, আমরা বুঝি আপনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারছেন না। এই জন্য এত উতলা হয়েছেন। কারণ, ক্ষমতায় না থাকলে যেসব অপকর্ম করেছেন তার জবাবদিহিতা করতে হবে। বেগম জিয়া কিছুই করেন নাই। তাতেই আপনি তাকে পাঁচ বছর ধরে জেলে ঢুকিয়ে রেখেছেন। আমাদের ইলিয়াস নাই, চৌধুরী আলম নাই; প্রায় ৬ থেকে ৭০০ জন গুম হয়েছে এর জবাব তো দিতে হবে।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। কিন্তু উনারা দুজন এখনো কারামুক্ত নন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৫ বছর ধরে কারাবন্দী। তারেক রহমান ১৭ বছর ধরে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
শুধু সারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নয়, সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের কথা বললে বেগম জিয়ার কথা চলে আসে। এরকম একজন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বিরল। যিনি এই বয়সে এসে সবকিছু বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ওপর এত অত্যাচার; এত মামলা নির্যাতন যে ভারতের মহাত্মা গান্ধীর সাথেও এরকম হয়নি।
এক অদ্ভুত দেশ বাংলাদেশ। যে দেশের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি (বেগম জিয়া) নয় মাস কারাবন্দী ছিলেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। একটি ঠুনকো মিথ্যা মামলায় প্রথমে পাঁচ বছর, পরে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ক্ষমতার লোভে মানুষ কত নিচে নামতে পারে, কত উপহাসের পাত্র হতে পারে!
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে দুদু আরও বলেন, সরকার পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে পারলে প্রতিদিন করে একটা করে প্রমোশন দেন। এর জবাব তো দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনের নামে যা করলেন- গুণ্ডামির একটা সীমা থাকে। আইন আদালতকে দলীয়করণ করেছেন।
কৃষকদলের সাবেক এ আহ্বায়ক বলেন, আমাদের লড়াই এখন শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। কোনোভাবে এই সরকারের ছাড় দেওয়ার পথ নাই। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।
আলোচনা সভার আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভিন কাওসার মুন্নির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, সংগঠনের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম, মহাসচিব মো. সোহরাব হোসেন রুবেল, জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র পরিষদের সভাপতি মোক্তার আখন্দের প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
টিএ/এমজে