ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। এ আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি।
বিএনপি বহুদিন ধরেই তাদের চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ‘আইন’ দেখিয়ে বিষয়টি নিয়ে কোনো সাড়া দেয়নি সরকারের পক্ষ। নতুন করে ক্ষমতাসীনরা বলছে, যদি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতেই হয় খালেদা জিয়াকে ফেরে কারাগারে ফিরতে হবে। আগের আবেদন বাতিল করে আদালতের কাছে নতুন আবেদন করতে হবে। আদালত যদি এ ব্যাপারে রায় দেন, তবেই হয়ত তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ মিলবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে আলাপের সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদমাধ্যমটির প্রশ্নকারীকেও পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। বলেন, আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? আদালতের কাজে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল বলেও জানান দেন শেখ হাসিনা।
এসব কথার পরও খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে- এমন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। সরকারের একাধিক সূত্র বলেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে আইনগত দিক থেকে সরকারের কিছু করার নেই বলে আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য আগে দিয়েছেন সরকার সেই অবস্থানেই রয়েছে।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
শারীরিক অসুস্থতা বাড়ায় গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ফের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ এ রাজনীতিবিদকে এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খালেদার মেডিকেল বোর্ডও অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিকস, কিডনি, লিভার ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। তার লিভার সিরোসিসের কারণে হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের ব্যাপারে তারা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেলে যাতে দ্রুত বিদেশে পাঠানো যায়, সে জন্য তারা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজ খবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলানিউজকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তার জনপ্রিয়তাকে সরকার ভয় পায় বলেই বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবো।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি প্রায় দুই বছর কারাবন্দী ছিলেন। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা রয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
টিএ/এমজে