ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক সংলাপের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয় আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট আছে বলেও দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন না।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) সমন্বয়ে প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করে। পরে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে প্রতিনিধি দলটি বিবৃতির আকারে তাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির প্র্রয়োজন মনে করে না দেশের বর্তমান শাসক দল।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ দলটির জোট যে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে তার মধ্যে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি রয়েছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি ভোটে অংশ নেবে না ও নির্বাচন প্রতিহত করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। এ দাবিগুলো আগেই নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্বে থাকা এবং সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
গত ৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। এ সময় আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে এবং এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না বলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ আছে কিনা- সেটিও জানতে চায় প্রতিনিধি দল। আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি যে এক দফা দাবি করেছে সেটা করেই দলটি সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফের গঠন, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্বাচন কমিশন বাতিল- এগুলো সম্ভব নয় বলে প্রতিনিধি দলকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় এ সব বিষয়ে জানান।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নভেম্বরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কোনো সংলাপে যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এটাই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। যে দলগুলো আসবে তাদের অংশগ্রহণেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি যে দাবিগুলো করছে সেগুলোয় ছাড় দেওয়া হবে না। যদি আলোচনা করতেই হয় দাবিগুলো ছেড়ে আসতে হবে বিএনপিকে। তাছাড়া দলটি নির্বাচনে না এলেও কোনো সংকট তৈরি হবে বলেও মনে করেন না ক্ষমতাসীনরা। যে কারণেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন শাসক নেতারা।
গত ১৫ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ যে চারটি শর্ত দিয়েছে বিএনপি- সেগুলো প্রত্যাহার করা হলে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বিএনপি সংসদের বিলুপ্তি চায়, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। সংলাপ হলে শর্ত কীসের? বিএনপির কোনো শর্তযুক্ত সংলাপে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে না।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) এ ব্যাপারে বাংলানিউজের কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে। স্বল্প আলাপে তিনি বলেছেন,নির্বাচন নিয়ে কোনো সমস্যা তো নাই যে সমাধানের জন্য সংলাপ করতে হবে। সংলাপের কি প্রয়োজন আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে; নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে; রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে। এখানে কে আসবে, কে আসবে না সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কেউ সংলাপ করতে চাইলে নো কন্ডিশন, উইদাউট কন্ডিশনে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
এসকে/এমজে