ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: বদিউল আলম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: বদিউল আলম

ঢাকা: সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।  

শনিবার (২১ অক্টোবর) গুলশানের একটি হোটেলে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

সেমিনারটির আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।  

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের সাংবিধানিকতা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কেবল একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতেই সরকার সব আয়োজন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বা কাউকে ক্ষমতায় বসাতে কথা বলছি না। আমরা বলছি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কথা। আমরা সুজনের পক্ষ থেকে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি এবং সেই আলোকে কাজ করছি। আমি মনে করি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, এই সরকার একদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অন্যদিকে মানবাধিকার হরণ করেছে। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিনা অপরাধে গ্রেফতার এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আজকের সেমিনারে নাগরিক ঐক্য যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছে, সেখানে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে মানবিক, গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে, কিছু কর্মসূচি বা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ এগুলো নিয়ে আরও ব্যাপক পরিসরে আলোচনা করার প্রয়োজন। একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা যে নামেই হোক না কেন, তার অধীনেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এখনো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তিনি বলেন, এই সরকার যে উন্নয়নের কথা বলে সেই উন্নয়ন হয়েছে তাদের সহযোগী লুটপাটকারীদের৷ দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি তো এক দলের সরকার না, এটি এক ব্যক্তির সরকার। উনি যা বলেন, সব মন্ত্রণালয় এমনকি বিচার বিভাগ ঠিক তাই করে। মধ্যযুগীয় রাজাদের মতো ক্ষমতা যার হাতে তার অধীনে আর যাই হোক, কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।

আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, আপনারা যদি জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করেন, জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তো বিদেশি শক্তি হস্তক্ষেপ করবেই। আপনারাই তো বিদেশি শক্তিকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। নাগরিক ঐক্য যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছে, আমি মনে করি এরকম একটি সরকার সংকট উত্তরণের জন্য এই মুহূর্তে দরকার।  

আবু সাঈদ খান বলেন, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৭ ও ১৯৪৬ এবং পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ ও ১৯৭০ সালে নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন নিয়েও এত প্রশ্ন ছিল না, যতটা প্রশ্ন করা যায় ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে। দলীয় সরকারের অধীনে এই দেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন।

সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে যে চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে, সেই সংকট অতিক্রম করে একটি গণতান্ত্রিক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আজকের এই সেমিনার। লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার দেশকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে একইসঙ্গে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে আবারও একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের পাঁয়তারা করছে।

তিনি বলেন, আমরা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন তথা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলছি। রাষ্ট্রের এমন একটি সংস্কার যাতে সত্যিকার অর্থেই জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হয়ে ওঠে এবং নতুন করে কোনো স্বৈরাচারের জন্ম হতে না পারে। আমরা একটা সম্ভাবনার সূর্য দেখছি এবং আমাদের বিশ্বাস, ‘আমরা পারব’।  

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে দেশ যে চরম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে, সেই সংকট উত্তরণের জন্য এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা প্রয়োজন যে সরকার ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করে একটি সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। এজন্য তিন দিন, তিন মাস, বা তিন বছর-কতদিন লাগবে তা বলছি না। তবে শাসন কাঠামোর সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিগত ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে সত্যিকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর কাদিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
এমকে/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।