ঢাকা: গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রেীয় নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই সরকারের যে ভাবগতি তাতে পরিষ্কার, এরা এক তরফা নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য তারা বিরোধী দলের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করে, দমন-পীড়ন করে নিজেদের রাস্তা পরিষ্কার করছে।
রোববার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে জোটের নেতারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের সড়কে প্রতিদিন মানুষ মরছে আর সরকার উন্নয়নের বড়াই করে চলেছে। বড় বড় প্রকল্প, স্থাপনা আমরা দেখছি, কিন্তু মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, তাদের সেবার প্রাপ্তি আমরা দেখছি না। এই বৈপরীত্ব নিয়েই দেশ চলছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ এবং সৌভিক করিম অর্জুনের স্মৃতির প্রতি, তাদের সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি আরও বলেন, সরকার শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কালিমালিপ্ত করার জন্য নানাভাবে তৎপর। তাদের এজেন্টরা নানাভাবে সন্ত্রাস, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিকে বানচাল করতে চায়। তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রামকে ধ্বংস করতে চায়। সেই কারণে ২৮ তারিখে পরিকল্পিতভাবে নিজেদের এজেন্টদের দিয়ে তারা উস্কানি দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা আরও বলেন, এই সরকারের এখন দুটি বড় অস্ত্র। একটি হচ্ছে ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলা, আরেকটি হচ্ছে নির্লজ্জতা। মিথ্যা কথা বলায় তারা রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। এই সরকার মিথ্যা বার বার বলে সত্যে পরিণত করতে চাইছে। একটি প্রবাদ আছে, কারো এক কান কাটা গেলে সে লুকিয়ে লুকিয়ে চলে, মানুষের সামনে সাধারণত আসতে চায় না। কিন্তু দুই কান কাটা গেলে তার আর লজ্জা থাকে না। সে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটে। আজকে এই সরকারের অবস্থা হয়েছে দুই কান কাটা। জনগণ যতক্ষণ পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এদের ঘাড় ধরে না নামাচ্ছে, এরা যাবে না। এরা নির্লজ্জ, মিথ্যাবাদী।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সরকারের যে ভাবগতি তাতে পরিষ্কার, এরা এক তরফা নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য তারা বিরোধী দলের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করে, দমন-পীড়ন করে নিজেদের রাস্তা পরিষ্কার করছে। কাজেই আন্দোলনই একমাত্র পথ। আন্দোলন করে এদের ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ না থাকলে তফসিল ঘোষণা না করা, স্থগিত করা বা পিছিয়ে দেওয়ার। দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। কাজেই আপনারা সাংবিধানিক কর্তৃত্ব প্রয়োগ করুন। একপাক্ষিক তফসিল ঘোষণা করবেন না। তা না হলে আপনাদেরও জনগণের কাঠগোড়ায় দাঁড়াতে হবে। কোনো রেহাই পাবেন না।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, এই লড়াই স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু ১৯৭২ সালে যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল, সেটি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেনি। এমন এক ক্ষমতার কাঠামো তৈরি করেছে, এমনভাবে সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছে, যাতে এক হাতে মানুষের অধিকারের কথা বলে, অন্য হাতে সব কেড়ে নেওয়া যায়। আজকে তার উপর দাঁড়িয়ে এই ফ্যাসিবাদ।
তিনি বলেন, এই ভোটাধিকারের আন্দোলন মাত্র একটি নির্বাচনের আন্দোলন নয়। এই ভোটাধিকারের আন্দোলন দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। এখানে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। দেশের মানুষ এই লড়াই চালাবে যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয় না হয়।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এই সরকার লুটপাট করার জন্য ক্ষমতায় থাকতে চায়। শ্রমিকরা বেতন চাইলে তাদের হত্যা করে লাশ দিতে চায়, কিন্তু মজুরি দিতে চায় না। এর ভেতর দিয়ে তারা টাকা সংগ্রহ করবে, বাজারে আগুন লাগাবে, মানুষ হত্যা করবে, তারপরও মানুষের অধিকার দেবেন না। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসনসহ সমস্ত জায়গায় তাদের দালালদের জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে নগরীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ