ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বাগেরহাট-১: নির্ভার আওয়ামী লীগ, ঘর গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
বাগেরহাট-১: নির্ভার আওয়ামী লীগ, ঘর গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি

বাগেরহাট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রধান বড় দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাশাপাশি ছোট ছোট দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক জনসভা ও ঘরোয়া সভা করছে।

 

অবস্থানগত কারণে বাগেরহাটের চারটি আসনই যেকোনো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-১ আসনে আওয়ামী লীগের হেবিওয়েট প্রার্থী থাকায় সব সময় সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি। শেখ পরিবারের ঘাঁটি খ্যাত এই আসন থেকে বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসছে। তবে বিএনপিরও চেষ্টা থাকে এই আসনটিকে নিজেদের দখলে নেওয়ার। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।

বিগত দিনের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীকালে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে উপ নির্বাচনে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন সংসদ সদস্য হন। ২০০১, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এই আসন থেকে শেখ হেলাল উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা এবারও এই আসন থেকে শেখ হেলাল উদ্দিন নির্বাচন করবেন। তবে আওয়ামী লীগের রিজার্ভ আসন হিসেবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।  

এদিকে এই আসন থেকে ১৯৯০ এর পরে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের নির্বাচিত হওয়ার তেমন কোনো রেকর্ড নেই। ১৯৯৬ সালে বিএনপির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন। দেড় মাস পরে ওই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে, আবারও নতুন নির্বাচন হয়। নতুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করে, তবে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান এবং ওয়াহিদুজ্জামান দীপু প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর বাইরেও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মাসুদ রানা ও মঞ্জুর মোরশেদ স্বপন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি।

বিগত দিনের নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা ও সংগঠিত নেতাকর্মীর কারণে এই আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।  

তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সব উন্নয়নকে ছাপিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ব্যাংকিং কেলেঙ্কারি আওয়ামী লীগের বিজয়ের অন্তরায় হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষেরা।  

ফকিরহাটের বাসিন্দা মুকুল হাওলাদার বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে আর তেমন ভালো কোনো নির্বাচন হয়নি। আগামীতে যদি সেই আগের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়, তাহলে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেব। আর যদি ভোট না হয়, তাহলে তো সময় নষ্ট হলো না।

চিতলমারী এলাকার সুমন শেখ বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব ভোট কাকে দেব। আপাতত মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ নির্বাচন করবে না।  

সদ্য ভোটার হওয়া আসাদ মোল্লা নামে এক যুবক বলেন, যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পাই তাহলে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব।

মোল্লাহাট উপজেলার কাজী লাইকুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিগত সময়ে বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপির কোনো শক্তিশালী প্রার্থী ছিল না। এবারের নির্বাচনে যদি এখানে বিএনপি বা অন্য কোনো দল শক্তিশালী প্রার্থী দেয় তাহলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। জনগণ সেই নির্বাচনের আগের আমেজ ফিরে পাবে।

ফকিরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম কারিম বলেন, ‘সরকার জনগণের দাবি মেনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে আমরা নির্বাচনে যাবো। সেক্ষেত্রে বাগেরহাট-১ আসনে যাকেই দল মনোনয়ন দেবে তার জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবো। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি অবশ্যই বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে প্রভূত উন্নয়ন করেছে। পদ্মা সেতুর উপকার ফকিরহাটের মানুষ ভোগ করছেন। প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আমি আশাবাদী।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, বিজয় আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি আমরা মূলত এখন দল গোছানোর কাজ করছি। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা ও পরামর্শ এবং কমিটি গঠন করছি। সব মিলিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এই আসনে আমাদের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।

মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কালিপদ বিশ্বাস বলেন, বাগেরহাট-১ আসনের চিতলমারী ও মোল্লাহাটে আমাদের রিজার্ভ ভোট রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে আমাদের সরকার যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে তাতে আগামীতেও জননেতা শেখ হেলাল উদ্দিন এই আসন থেকে নির্বাচিত হবেন।

এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন এই আসনের প্রতিটি উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করছে। প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান।

তিনি বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা বাগেরহাটের চারটি আসনেই আমাদের প্রার্থী নির্বাচন করবো। বাগেরহাট-১ আসনে নির্বাচনের জন্য মাও. আবুল বাশার ও মো. ইউছুপ আলী নামে দুইজন প্রার্থী প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।  
গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাকেরপার্টি ও খেলাফত মজলিশের নির্বাচন কেন্দ্রিক দৃশ্যমান তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সরব হতে পারে দলগুলো।  

এদিকে বাগেরহাট-১ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় ওলামা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এস এম আল জুবায়েরের এর নাম শোনা যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সময় এলাকায় সভা-সমাবেশও করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। এছাড়া এলাকায় বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজেও তার পক্ষ থেকে অংশীদারিত্ব দেখা যায়।

জাতীয় ওলামা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এস এম আল জুবায়ের বলেন, নির্বাচন করার জন্য আমি জনগণ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব।  

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, বাগেরহাট-১ আসনে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৫ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৩ জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ১লাখ ৭৩ হাজার ১৪১ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬. ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।