ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২০ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

জেল হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না সরকার: রিজভী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৪, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
জেল হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না সরকার: রিজভী

ঢাকা: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, জেল হেফাজতে মৃত্যু ও হত্যার দায় এড়াতে পারবে না এ সরকার ও মাফিয়া চক্রের কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদের একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

তিনি বলেন, দখলদার সরকার তাদের দখলদারত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকে পরিণত করেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের প্রতিপক্ষের লোকেদের জীবন রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও বন্দুকের নলের নিচে বন্দি।  

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। বাইরের মতো কারাগারগুলোও পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। কারাগারগুলোকে হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো চেম্বারের পরিণত করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, দেশের ৬৮টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল, যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু আতঙ্কে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা। সেখানে গায়েবি মিথ্যা মামলায় সুস্থ-সবল নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করে কারাগারে নিক্ষেপের পর লাশ বানিয়ে বের করা হচ্ছে। কারাগার থেকে বের হচ্ছে লাশের সারি।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, আজ পত্রিকায় এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা-কর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।  

তিনি বলেন, গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের, যাদের বেশিরভাগই বিএনপি নেতাকর্মী। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বিএনপি নেতাকর্মী।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সম্প্রতি ধরপাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতা, কর্মী, সমর্থক দিয়ে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তারা অসুস্থ হচ্ছেন এবং ধুঁকে ধুঁকে সেখানে মরছেন। গত ৭ নভেম্বর একটি পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে কারা কর্তৃপক্ষের বয়ানে জানিয়েছে, সারাদেশের কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। কারা অধিদপ্তরের ৫ নভেম্বরের হিসাবে, দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম। তাতে রয়েছেন প্রায় ৮৮ হাজার বন্দি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, নিষ্ঠুর দমনের বিভীষিকায় বাংলাদেশে বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে কারাগারে বন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কেউ যাতে টু শব্দ করতে না পারে সেজন্য কারাগারের ভেতরে বাইরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাদের জীবন হরণে নানাবিধ অমানবিক আচরণ। কারাবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়। চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, অসুস্থ বন্দিদের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালে ফেলে রাখা হচ্ছে। কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু—ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর পর সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়ানোর জন্য গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে।

রিজভী বলেন, একতরফা নির্বাচনের খরচ জোগাতে মন্ত্রী-এমপি-নেতারা সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে চলছে আওয়ামী অলিগার্কদের ডাকাতি। দুইদিন আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেয়াজের দাম। ১০০ টাকার পেঁয়াজ দুই-দিনে প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত তুলেছে। পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।  

তিনি বলেন, সরকার সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনী ক্যারিক্যাচার নিয়ে উন্মাদের মতো আচরণ করছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। তাদের সব শরিকরা চায় নৌকা। মুখে বলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু সবই তো নৌকা। মাঝি একজনই।

তিনি আরও বলেন, দেশে পেঁয়াজ, রসুন, ডাল ও চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোনো বিধিবিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়ত তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিত না।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেপ্তার ১১০ জনের বেশি নেতাকর্মী। মোট মামলা পাঁচটি। ৪৩৬ জনের বেশি নেতাকর্মী আসামি বলেও জানান রিজভী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ 
টিএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Scratch over any ad to remove it