বরিশাল: বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থল থেকে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেছেন। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ বলছে, অসুস্থ হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের অনুসারীরা বলছেন, বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের লোকজনের হামলায় আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সিরাজ সিকদার (৫৮) নামে ওই ব্যক্তি। আর পঙ্কজ নাথের অনুসারীরা বলছেন, শাম্মী আহমেদের লোকজনের হামলায় এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জনসভাস্থলে প্রবেশের সময় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ ও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরই সিরাজ সিকদারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজ সিকদার বরিশালের হিজলা উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কোব্বাত সিকদারের ছেলে। পঙ্কজ ও শাম্মী উভয়ের অনুসারীরাই সিরাজকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছেন।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভুট্টো মোল্লা বলেন, মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে ঢুকছিলাম। আগে থেকে অবস্থান নেওয়া শাম্মী অনুসারীরা আমাদের বোতল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সিরাজসহ ১৫ জনকে আহত করে তারা। এর মধ্যে সিরাজ নিহত হয়েছেন।
মেহেন্দিগঞ্জের বদরপুরের মোটরবাইক সমিতির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, আমরা পঙ্কজ নাথের ঈগল প্রতীকের মিছিল নিয়ে ব্রিজ পার হয়ে মাঠের মধ্যে ঢুকেছি, তখন কাছাকাছি ছিল শাম্মী আহমেদের লোকজন। তারা প্রথমে আমাদের বোতল নিক্ষেপ করে এবং পরবর্তীতে ফেস্টুনের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আমাদের ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন এবং একজন মারাও গেছেন। আমরা এর বিচার প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি করছি।
শাম্মীর অনুসারী হিজলা উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, সিরাজ সিকদার জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আমাদের সঙ্গেই আসেন। তিনি গুয়াবাড়িয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি। পঙ্কজ নাথের লোকজন জনসভাস্থলে আসার পর হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটে। আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, তার গায়ে আঘাত লাগে এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। সিরাজ সিকদার ছাড়া ওই হামলায় আমাদের আরও ৪-৫ জন আহত হয়েছেন।
সিরাজ সিকদারকে শাম্মী অনুসারী বলেও দাবি করেন মঞ্জুর মোর্শেদ।
কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সিরাজকে যিনি হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন, তিনি জানিয়েছেন, সিরাজ জনসভা মাঠ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন।
ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সিরাজ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কবির উদ্দিন বলেন, একজনকে নিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তবু সন্দেহের কারণে আমরা মরদেহ মর্গে পাঠিয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ডা. কবির আরও বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
এমএস/এইচএ/