মাদারীপুর: আওয়ামী লীগের দলীয় সভানেত্রী শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে মাদারীপুরের কালকিনিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ভাষণ দেন।
দলীয় আয়োজনে হলেও মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উল্লেখযোগ্য নেতারা।
জনসভায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের আপত্তি থাকায় তাদের প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মাদারীপুরে স্বাগত জানাই। অনেক ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও তার জনসভায় আমাদের যাওয়া হলো না। এটা মনে দুঃখ থেকে গেলো। ’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আগে কালকিনিতে একটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অংশগ্রহণ করেন। তিনি আমাদের কাছে নামের প্রস্তাব চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১১ জন নেতার নামে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু মির্জা আজম আমাদের জানিয়েছেন, আবদুস সোবহান গোলাপ চান না আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাই। তাই আমাদের ডিউটি পাসও হয়নি। আমাদের প্রসঙ্গে তার আপত্তি কেন সেটা তিনিই ভালো জানে। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। ’
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা উপলক্ষে গত সোমবার কালকিনি পৌরসভা মাঠে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সোবহানসহ জেলার অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা জ্যেষ্ঠ আরও কয়েকজন নেতার নাম রাখা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে আবদুস সোবহান আপত্তি জানালে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জেলা ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতারাই প্রধানমন্ত্রী জনসভায় যাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১১ নেতার নাম পাঠানো হয়। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সহ-সভাপতি সিরাজুল হক ফরাজি, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খান, যুবলীগের সভাপতি আতাহার সরদার, সাধারণ সম্পাদক রুবেল খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিরাজ হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার। ’
তিনি আরও বলেন, ‘নামের প্রস্তাব পাঠানো এ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমকে সমর্থন করায় আবদুস সোবহান গোলাপ চান না তারা কেউ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকুক। তাই তিনি (গোলাপ) বিরোধিতা করায় সবার যাওয়ার ইচ্ছে থাকার পরেও তা হয়নি। ’
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ ফরাজি বলেন, ‘স্থানীয় এমপি চান না আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাই। তাই আমাদের যাওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও সেটা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের খারাপ লাগার বিষয় হলেও পরিস্থিতি মেনে নিতে হচ্ছে। ’
কালকিনি, ডাসার ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। তিনি আবদুস সোবহানের বিপক্ষে নির্বাচনের অংশ নেওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আওলাদা হোসেন, ভবতোষ দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মো. লোকমান হোসেন বাদে বাকি সবাই তাহমিনা বেগমকে সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও জ্যেষ্ঠ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকেননি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাছাড়া স্থানীয় এমপি গোলাপ চান না আমরা ওই অনুষ্ঠানে যাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে একবার জানানো পর্যন্ত মনে করেনি তিনি (গোলাপ)। তাই আমাদের সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র কেউই যাননি। ’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘তারা যে কথা বলেছেন, এই কথা সঠিক না। ব্যাস, এটুকুই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
আরআইএস