ঢাকা: ক্ষমতাসীনদের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে প্রথম দিকে সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে পদযাত্রা, এরপর মহাসমাবেশ।
বিএনপির কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বয়কট করে হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও বাস্তবতা বিবেচনায় ভোট ঠেকাতে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দল। নির্বাচনকে একতরফা আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের আওতায় গণসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে দলটি।
বিএনপি বলছে, সহিংসতা তৈরি হতে পারে এমন কর্মসূচিতে যেতে চায় না তারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি ধৈর্য সহকারে সতর্কতার সঙ্গে সামনে এগোনোয় কৌশলী হচ্ছে। এমনকি হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে অন্য কোনো পক্ষকে নাশকতা করার সুযোগ দিতে চায় না। তা ছাড়া নেতাকর্মীদের আর নতুন করে ধরপাকড়ের মুখেও ঠেলে দিতে চায় না তারা।
বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ভোটের পর দিনও হরতাল অব্যাহত রাখা হতে পারে। পর্যায়ক্রমে নির্বাচনের ফল বাতিল ও একদফা দাবিতে নতুন করে জনগণকে সংগঠিত করতে সভা-সমাবেশের মতো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। তবে, ভোট ঠেকাতে হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচি ঘোষণার পরামর্শ দিলেও বর্তমান বাস্তবতায় দলটির সিনিয়র নেতারা তা আমলে নেননি।
দলটির পর্যবেক্ষণ, প্রায় দুই মাসের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি এখন অনেকটাই শিথিল। দুয়েকটি ঝটিকা মিছিলেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। অপরদিকে, পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে অন্য পক্ষ নাশকতা-সহিংসতা করার সুযোগ পায়। এরপর বিএনপির ওপর তার দায় চাপিয়ে সরকারসহ কোনো কোনো মহল থেকে দলকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, কঠোর কর্মসূচি দিলে নতুন করে গ্রেপ্তার শুরু হতে পারে। কেননা, গত বছরের শুরুতে দল বড় শো-ডাউনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের বার্তা দিয়েছিল। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও আশা সঞ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহা সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও এর পরের পরিস্থিতি সব কিছু পাল্টে দেয়। ওই সমাবেশে পুলিশকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হন। দলীয় কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। দেশজুড়ে নেতাকর্মীরা মামলা-গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে পড়েন।
সেক্ষেত্রে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাকর্মীর সংকট তৈরি হতে পারে। সব মিলিয়ে কোনো কোনো পক্ষ থেকে ভোট রুখে দেওয়া কিংবা প্রতিহত করার প্রস্তাব এলেও বাস্তবতা বিবেচনায় সে পথে হাঁটছে না দলটির হাইকমান্ড। এর পরিবর্তে ভোট বর্জনের প্রচারণা জোরদার করবে। গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া যায়। জনগণ ভোট বর্জন করলে নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার বিএনপিকে বারবার সহিংসতার ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র করে আসছে। কিন্তু আমরা সে ফাঁদে পড়তে চাই না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাই। সরকার জোর করে নির্বাচন করে ফেললেও টিকতে পারবে না। কারণ, এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা দেশে-বিদেশে কোথাও পাবে না।
বিএনপি নেতারা ধারণা করছেন, নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র কঠোরভাবে ভিসা নীতির প্রয়োগ ও ধাপে ধাপে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এ জন্য নির্বাচনের পর জনগণকে সম্পৃক্ত করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। এমন পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি চাপে সরকার আলোচনার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৪
টিএ/এমজে