ঢাকা: দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতিসহ জনজীবনের বিভিন্ন সংকট নিয়ে রাস্তায় নামতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দল। নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচির পাশাপাশি এসব দল এক হয়েও কর্মসূচির কথা ভাবছে।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জোটের টানাপোড়েন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের অন্যদের দূরত্ব এবং জোটে স্থবির পরিস্থিতির কারণে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধরে রাখতে তারা এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ১৪ দল নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থার জন্য জোটের নেতারা আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন।
জোটের নেতাদের দাবি, বর্তমানে জনজীবনে সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার বারবার পদক্ষেপের কথা বললেও কাজের কাজ হচ্ছে না। সংকট বেড়েই চলেছে।
ক্ষমতাসীন জোটে থেকেও সরকার বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই অন্যদের। দীর্ঘদিন জোটের কোনো বৈঠক হয় না। জনজীবনের এসব সংকটগুলো সমাধানে দাবি জানানো, কথা বলা- রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। এ প্রেক্ষাপটে বিষয়গুলো নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও তারা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ দলভুক্ত একটি দলের এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। আমাদের অন্য দলগুলোর নিজস্ব কর্মসূচিও হারিয়ে গেছে। জোটে থাকার কারণে অনেক কথাই এতদিন বলা যায়নি, এমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া যায়নি, যেটি সরকারের বিরুদ্ধে যাবে। মাঠের কর্মসূচি না থাকায় নিজেদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। অন্য দলগুলোর কোনো কোনোটি এখন নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ১৪ দলের স্থবিরতার কারণে অনেকেই এখন সরকারের বিরুদ্ধে গেলেও জনজীবনের সংকট নিয়ে কর্মসূচির কথা ভাবতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আগেও জনজীবনের সংকট নিয়ে কথা বলে আসছি। আমাদের দল থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আমাদের দলের সংগঠনগুলোও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। আমরা আরও কর্মসূচি দেব। ১৪ দল অনেক দিন ধরে স্থবির, সেভাবেই আছে। আগামীতে আমাদের দলের কর্মসূচি আরও বাড়বে।
জোটের দলগুলোর কোনো কোনোটি নিজস্ব কর্মসূচির কথা ভাবছে, পাশাপাশি অন্য দলগুলোকে নিয়ে যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকা যায়, সে চিন্তা-ভাবনাও করছে বলে নেতারা জানান।
এসব দলের নেতাদের সঙ্গে বলে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন কারণে জনজীবনে সংকট তৈরি হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদের মতো ইস্যুগুলোতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে জোটের কোনো কোনো দল। আবার জোটের অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামলে কর্মসূচি আরও জোরালো করা যাবে। পাশাপাশি জোটের দলগুলোও একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে পারবে। এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ১৪ দলভুক্ত কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ দলের কোনো অবস্থান দেখছি না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রদায়িকতা থেমে নেই। এসব বিষয় নিয়ে তো আমাদের কথা বলতে হবে। আমরা রাজনীতি করি, আমাদের প্রত্যেক দলেরই এ নিয়ে দায়বদ্ধতা আছে। জোটের অন্য দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এসব ইস্যুতে মাঠে নামতে পারি।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, দ্রব্যমূল্য, দুনীতি, সাম্প্রদায়িকতাসহ জনজীবনে যেসব সংকট রয়েছে, সেসব নিয়ে প্রথমে আমরা নিজ নিজ দলের কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। পাশাপাশি ১৪ দলের অন্য যারা আছে, তাদের সঙ্গেও যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির আলাপ-আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৪
এসকে/আরএইচ