ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

৬১ দিন ‘আয়নাঘরে’ বন্দি ছিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
৬১ দিন ‘আয়নাঘরে’ বন্দি ছিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘরের’ রহস্য উন্মোচন হয়। সেখান থেকে ইতোপূর্বে তিনজন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন।

বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া বিরোধী দলের নেতা-সমর্থকদের আয়নাঘরে রেখে নির্যাতন চালানো হতো।

এবার দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফেরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানালেন, তাকেও আয়নাঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল। টানা ৬১ দিন আয়না ঘরে বন্দি ছিলেন তিনি।

রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলেই একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।  

তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে এবং অস্ত্রধারীরা মিলে উত্তরার একটি বাসা থেকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গাটি ছিল কবরের মতো একটি কামরা। আমার মনে হয়েছিল এটি কোনো বাড়ির নিচতলা হবে। কামরাটির আয়তন হবে পাঁচ ফিট বাই ১০ ফিট। টয়লেটের জন্য জায়গাটাতে কোনোরকম একটা ব্যবস্থা ছিল। আমাকে লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া হতো। ’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কামরাটির বাইরে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান চালু থাকত এবং ছাদের সঙ্গে হাই পাওয়ার লাইট ছিল। এ ঘরটিতে আমাকে প্রায় ৬১ দিন রাখা হয়। এ সময়ে একদিনের জন্যও বের করা হয়নি। সেখানকার অন্যান্য বিষয়ে আমি বলতে চাই না। কারণ যারা এসব করেছে তারা তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের ইশারায় করেছে। আমি মনে করি এসব কাজের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে কোথাও না কোথাও তাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে। ’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘যেদিন আমাকে নিয়ে আসে সেদিন দুপুরে একইভাবে চোখে কালো কাপড় বেঁধে আনুমানিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘোরানো হয়। থামার পর আমার মনে হলো যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চোখে দেখতে না পারায় ঠিক বুঝতে পারিনি। সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করল তারা। হয়তো তারা রাতের অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করছিল। এরপর কিছুদূর হাঁটিয়ে আবার কিছুদূর গাড়িতে করে একটা জায়গায় এনে আমাকে তোলা হয়। আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে সেটা সীমান্তের কাছাকাছি কোনো জায়গা হবে। সেখানেও কিছু সময় অপেক্ষা করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘এতসবের পর সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে আমাকে শিলংয়ে একটি মাটির ঘরে ফেলা হয়। পরে জানতে পারি জায়গাটির নাম গলফ লিংক। তখনও সূর্য ওঠেনি। অর্থাৎ তখনও সকাল হওয়ার বাকি ছিল। এরপর আমি পরিচয় দিয়ে সকালে ভ্রমণকারীদের কাছে পুলিশে খবর দেওয়ার অনুরোধ জানাই। এরপর পুলিশ এসে আমাকে হেফাজতে নেয়। ’

তিনি জানান, ‘এ সময়ে আমাকে ঠিকঠাক মেডিসিন সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। ভালো পানি ও তিনবেলা খাবার দিয়েছে। এর বেশি তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। ’

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফেরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার দুপুর সোয়া ২টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।