ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

স্বৈরাচারের সহযোগী দলগুলোর রাজনীতি ১০ বছর নিষিদ্ধ করা উচিত: নুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
স্বৈরাচারের সহযোগী দলগুলোর রাজনীতি ১০ বছর নিষিদ্ধ করা উচিত: নুর

ঢাকা: গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডাকসুর নুরুল হক নুর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে আইন করে দশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। যাতে এটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।

পতিত সরকারের আমলে ছাত্রলীগ যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।  

নুরুল হক নুর বলেন, দুই বছরের জন্য একটা জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার প্রয়োজন, যারা রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন এনে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে। ছয় মাস এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হলে বিদ্যমান ব্যবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। এই সরকার একটি অরাজনৈতিক ও বিপ্লবী সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনা একটি রাজনীতি। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। এনজিও মার্কা চেহারা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। তাই অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার তাদের পরিধি বাড়িয়ে বিভিন্ন দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ সরকার গঠন করা উচিত। অন্যথায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব থাকলে আমরা দুই বছর বললেও এই সরকারের ছয়মাস টিকে থাকা মুশকিল হবে।  

ডাকসু’র সাবেক ভিপি বলেন, সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচিত ১১ জনের মধ্যে ভিপি হিসেবে আমিসহ মাত্র দুজনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। ভোট গণনায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য সেই সময় ভোররাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।  

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ছাত্র সংগঠন গত ১৫ বছরে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতির নামে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এখন ছাত্র রাজনীতির কথা শুনলেই ভয় হয়। ছাত্রলীগের বিগত সময়ে নানা কর্মকাণ্ড আমাদের শঙ্কিত করে তোলে। ছাত্র রাজনীতির কথা ভাবতেই মনে হয় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ সব ধরনের অপকর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হল দখল, সিট দখল, গণরুমে নির্যাতন, র‌্যাগিং অতি সাধারণ কর্মকাণ্ডে পরিণত করেছিল ছাত্রলীগ। ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিছিলে নিয়ে যাওয়া, দলীয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা, হলে মাদকের ব্যবসা, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অস্ত্র ভাড়া দেওয়াসহ বহুমুখী অপকর্মে জড়িত ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের দেওয়া তালিকা থেকে নিয়োগ দিতে হতো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল উন্নয়ন কাজে পার্সেন্টেজ নিতো তারা। ঠিকাদারি কাজ কারা পাবে প্রশাসনকে সে নির্দেশনাও ছাত্রলীগ দিতো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ক্ষমতা, সম্পদ, টাকা পয়সা, তদবির বাণিজ্যই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই সময়ের ছাত্র রাজনীতিতে। বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ছাত্রলীগ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে অত্যাচার করেছে তার জন্য তাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিসি, প্রো ভিসি, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, কখনও ভাবি ছাত্র রাজনীতি না থাকলেই হয়তো ভালো হয়। আবার ভাবি এই ছাত্ররাই তো ৫২, ৬৯, ৭০, ৭১, ৯০ সহ সকল আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে আমাদের অধিকার আদায় করেছে। জুলাই বিপ্লবে হাজারেরও বেশি ছাত্র জনতা শহীদ হয়ে দেশে নতুন স্বাধীনতার জন্ম দিয়েছে। চোখ হারিয়ে, পঙ্গুত্ব বরণ করে হাজার হাজার ছাত্র জনতা এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। সর্বশেষ যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে তার অগ্রভাগে ছিল আমাদের ছাত্ররা। তাহলে কেন আমরা ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকবো না।  

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, জোসিন্তা জিনিয়া, সাংবাদিক সৈয়দ আব্দুল মুহিত, সাংবাদিক শারমিন নাহার নীরা ও জাফর ইকবাল। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
এমএমআই/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।