সিরাজগঞ্জ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, সব দলকে বন্ধ করে একা থাকতে চেয়েছে। তারা এক দলে বিশ্বাস করে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন চত্বরে জেলা বিএনপি আয়োজিত সম্প্রীতির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ মঞ্চটি ভেঙে মাইক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য দেন তিনি।
দীর্ঘ দুই বছর পর নিজ জেলায় এসে টুকু বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের জেল-জুলুম-অত্যাচার-হত্যা-হামলার শেষ হয়েছে সাইদ-মুগ্ধদের রক্ত দিয়ে। আমার পরিবার গত ১০০ বছর ধরে সিরাজগঞ্জের মানুষের পাশে আছে। আমরা সিরাজগঞ্জের মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তাই আমরা বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই। সরকারে যাই, আবার ফিরে আসি। গত ১৬ বছর সিরাজগঞ্জে আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হতে পারি নাই, বাজারে আসতে পারি নাই ওসি সাহেবের অনুমতি ছাড়া। বাজারে আসতে দেয় নাই, সেখানে নাকি রাজার বাড়ি আছে। আমি জানি না, বাজারে কোন রাজার বাড়ি যে আমরা আসতে পারব না। আমি বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলাম, শুনলাম হাসিনার আদালত আমাকে সাজা দিয়েছে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম, হাসিনার এ অন্যায় বিচার মানব না, হাসিনার জেলে যাব না। বিদেশে থেকেই নেতাদের সঙ্গে কথা বলব। আন্দোলন করব। আমি তাই করেছি।
সাবেক এ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগের রাজপরিবারের সেই রাজা নাকি বলেছে, আমি আর ফিরব না। আমি ফিরেছি, আমি পালাই নাই। আজ যারা উন্নয়ন উন্নয়ন করে। উন্নয়ন মানে দুর্নীতি. উন্নয়ন মানে কোটি কোটি টাকা লুট করা, লুট করে বাংলাদেশ ফোকলা করে গেছে। প্রশাসন পুলিশ নষ্ট করে গেছে।
টুকু আরও বলেন, আমার বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে যায়, দম্ভ দেখিয়ে বলে টুকুর শার্ট যেন লাল হয়ে যায়। টুকু আর কোনোদিন আসবে না। টুকু এসেছে, লাখো জনতাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কোনোদিন পালিয়ে যাই নাই। তারা ১৯৯৬ সালে মাফ চেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। পঁচাত্তরের পর সিরাজগঞ্জে কোনো আওয়ামী লীগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবারও পালিয়েছে, আর নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না। আমার নেতা জিয়াউর রহমান পালিয়ে যায় নাই, খালেদা জিয়া পালিয়ে যায় নাই। ইলেকশন দিয়েছে বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েছে, কিন্তু দেশ ত্যাগ করে নাই।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে টুকু বলেন, আমাদের সংগ্রাম শুরু। আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব। কারও সঙ্গে বেয়াদবি করব না। যারা বেয়াদবি করবে, তাদের স্থান বিএনপিতে হবে না। আমার চেয়ারম্যানের ক্লিয়ার নির্দেশ আছে। সবাই ভালো হয়ে যাও, মানুষের সাথী হও। ১৬ বছর মানুষ কষ্ট করেছে, সেই মানুষকে যে কর্মীরা কষ্ট দেবে তারা আমার কর্মী না। তারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের যে নেত্রী হাজারো মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করে পালিয়ে গেছে, তার বিচার বাংলার মাটিতে হবে। জিয়াউর রহমান সব দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের ভাইদের বলি, আপনারা সবাই খারাপ তা নয়, কিন্তু যারা খারাপ কাজ করেছে, তাদের রেহাই দেওয়া হবে না। আপনারা যারা ভালো আছেন, তারা সৎভাবে রাজনীতি করেন। বিএনপি কোনো বাধা দেবে না। কিন্তু যারা সিরাজগঞ্জে রক্ত বইয়েছে, শেষের দিন পর্যন্ত আমার চারটা কর্মীকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার সিরাজগঞ্জের মাটিতে হবে। যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তাদের বিচারও হবে।
তিনি বলেন, ৭ মার্চ ইতিহাসের কোনো মাইলফলক নয়। যে জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণার পরিবর্তে জয় বাংলা জয় পাকিস্তান স্লোগন দেওয়া হয়েছে, সেটা স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পারে না। বেশি খোঁচাখুঁচি করবেন না, ইতিহাসের আসল রূপ বেরিয়ে পড়বে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবর রহমান লেবু, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, নূর কায়েম সবুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ সুইট, মির্জা মোস্তফা জামানসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
দুই বছর পর বৃহস্পতিবার টুকু জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ শহরে এসেছেন। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। এরপর ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
এসআই