ঢাকা: গত জুলাই-আগস্ট মাসে যে গণহত্যা হয়েছে তার উপযুক্ত বিচার এবং বিচার কাজকে একটা পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া নতুন বছরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে উল্লেখ করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে নতুন বছরের প্রত্যাশা শীর্ষক বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, নতুন বছরের কাজগুলোর বিষয়ে যদি আমি চিন্তা করি, মুক্তিযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বেশি যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, ১৬ বছর ধরেই হয়েছে, বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্ট মাসে যে গণহত্যা হয়েছে, তার একটা উপযুক্ত বিচার। এ গণহত্যার বিচারের কাজকে একটা পর্যায়ে পর্যন্ত এগিয়ে নেয়া, বিশ্বাসযোগ্যভাবে, যেটা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। এ বিচার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া, এ বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৬ বছর ধরে যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, ঘুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন হয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়ার কোম্পানির মতো বাংলাদেশকে লুটের বাজারে পরিণত করা হয়েছে। এগুলো বিচারের আওতায় আনা, জাতি হিসেবে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্তব্য হিসেবে মনে করি এবছরের জন্য।
তিনি আরও বলেন, বাজার এখন পর্যন্ত বেসামাল, মানুষ সমস্ত পরিবর্তনের পর দেখতে চায়, বাজারে তার এক্সেস আছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। তারা কিন্তু এখন পর্যন্ত অস্থির। কয়েক কোটি মানুষের খাদ্য গ্রহণ কমে গেছে। কিছু পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বাজার পুরোপুরি স্বল্প আয়ের মানুষের নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
তিনি বলেন, এখনতো পুরোনো সিন্ডিকেটগুলো নেই। তাহলে কেন এত বিশাল সমর্থনের পরেও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যে সমস্ত ভোগ্যপণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে, খুচরা বাজারে তার বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। ফলে কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে এটাকে দেখা দরকার। মানুষকে সুরক্ষা দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এখন পর্যন্ত মানুষের আস্থার জায়গায় আসতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলা প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষের জান-মাল এখন পর্যন্ত হেফাজত করা যায়নি।
বাম এ রাজনৈতিক নেতা আরও বলেন, এক ধরনের মানুষের নিজের চেতনার বিবেক থেকে দেশটা চলছে। সরকার খুব ভালো দেশ চালাতে পারছেন এরকম কোনো আশাবাদ ব্যক্ত করা যাচ্ছে না। যেহেতু আমরা অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী এবং সমর্থন দিয়েছি, এ সরকারকে আমরা সফল করতে চাই। মানুষ এখনো সরকারকে সহ্য করছে। সচিবালয়ের দিকে তাকালে বোঝা যায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা প্রশাসন কোন পর্যায়ে আছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এভাবে রাষ্ট্র সরকার দেশ চলতে পারে না। অনেক হয়েছে, পাঁচ মাস পরে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্বের মধ্যে আনা দরকার, বিভিন্ন স্তরে যারা দায়িত্বে আছেন। এগুলো না হলে আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, রূপান্তরের কথা বলছি, পরিবর্তনের কথা বলছি, বাস্তবে মানুষের কাছে তখন এগুলোর কোনো আবেদন থাকবে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহেরের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কালের কন্ঠের সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বাংলানিউজের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক আলি আহসান জুনায়েদ ও বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
আরকেআর/জেএইচ