ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, প্রস্তুতি নিন: তারেক রহমান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, প্রস্তুতি নিন: তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে উল্লেখ করে এজন্য নেতা-কর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দলের বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। জনগণও বিএনপিকে বিশ্বাস করে। সুতরাং আপনাদের প্রতি বিএনপির প্রতি জনগণের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জনগণের সঙ্গে থাকুন জনগণকে সঙ্গে রাখুন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বিএনপি সমার্থক। দেশে গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি থাকে। গণতন্ত্র বিপন্ন হলে বিএনপির স্বার্থও বিপন্ন হয়। মাফিয়াপ্রধানের (শেখ হাসিনা) পলায়নের পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন।

তিনি সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

তারেক রহমান বলেন, আমার মনে হয়, এখানে উপস্থিত এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যার সঙ্গে আমার অন্তত একবার হলেও কথা হয়নি কিংবা ‘টেক্সট মেসেজ’ আদান-প্রদান হয়নি। তবে আজ এখানে সবাইকে একত্রে পেয়েছি। আপনাদের অভিনন্দন। আমি বিশ্বাস করি যে দলে আপনাদের মতো ত্যাগী এবং সাহসী নেতাকর্মী রয়েছে সেই দলকে কোনো স্বৈরাচারই দমিয়ে রাখতে পারে না।  

এই মুহূর্তে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির কাছে জনগণের যেমন আশা-ভরসা-প্রত্যাশা রয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে নেই। সুতরাং চক্রান্তকারীদের মোকাবিলা করে কীভাবে দলকে আরও শক্তিশালী এবং সুসংহত করা যায় আমি আশা করি আপনাদের আলোচনায় সেই সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে।

তিনি বলেন, সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক-শ্রমিক দরিদ্র-মেহনতি-স্বল্প আয় কিংবা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত-পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী তরুণ-তরুণী তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষা এবং জীবন মানোন্নয়নে আপনাদের নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, আশা করি আপনাদের বক্তব্যে সেসব বিষয়ও থাকবে।  

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পক্ষে-বিপক্ষে অবশ্যই আপনারা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবেন। তবে একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, সেটি হলো বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারের নানা বিষয়ে আমাদের মতের অমিল থাকতেই পারে। সুতরাং বক্তব্য দেওয়ার সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিরোধকে এড়িয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয় বলেই আমি মনে করি।
 
‘আমরা সবাই আমাদের ঐক্যের শক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত। ঐক্যই আমাদের বারবার বিজয় আর সফলতা এনে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি আলোচনা সমালোচনা যেন নিজেদের মধ্যকার ঐক্য বিনষ্টকারী কিংবা দলের ক্ষতির কারণ না হয়। আরও একটি বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নেতা-নেত্রীদের সম্পর্কে আপনারা বক্তব্য দেওয়ার সময় দয়া করে প্রশংসাসূচক শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিমিতি বোধের পরিচয় দেবেন। ’

আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশকে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ভিন্ন দল এবং মতের নেতাকর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কেবল বিএনপিরই প্রায় ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেক নেতাকর্মীর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি।

‘শুধু বিএনপি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থককে গুম-খুন-অপহরণ করা হয়েছে। তবুও বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। স্বৈরাচারের সঙ্গে করেননি আপস। আপনাদের এই সৎসাহস এবং সততার কারণে বিএনপি আজ শুধু একটি সাধারণ রাজনৈতিক দলই নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি। এ কারণেই দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আচরণ-আচরণে হতে হবে আরও সতর্ক এবং সংযত। ’

তিনি বলেন, আমি আপনাদের আবারও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। শহীদ জিয়া বলেছিলেন- ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়। দলের প্রতি আপনার আপনাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘ দিনের সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তারপরও যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হবেন ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হয়েই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।    

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫
টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।