ঢাকা, বুধবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৮ মে ২০২৫, ০০ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচন যেন জুলাই হত্যার বিচার দৃশ্যমান হওয়ার পরে হয়: আখতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৮, মে ২৭, ২০২৫
নির্বাচন যেন জুলাই হত্যার বিচার দৃশ্যমান হওয়ার পরে হয়: আখতার ছবি: ডিএইচ বাদল

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নির্বাচন যেন চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান পর্যায়ে আসার পরে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলাদেশে আর কখনো মানুষের জীবন দিয়ে রাজপথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না হয়।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংস্কার সমন্বয় কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর: মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে হাসিনা আমলের মতো করে নয়, বরং সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, বিচারব্যবস্থার যে ইউনিভার্সাল কোডগুলো রয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই যেন বিচার সম্পন্ন হয়।

এসময় এ টি এম আজহার সাহেবের মুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো মানুষ যেন রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়ে জীবন না হারান তা নিশ্চিত করা হয়। এ টি এম আজহার সাহেবের মুক্তির মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তার যে অধিকার, সেই অধিকার তিনি অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা যেমন ছিল, তা জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আমরা যে নতুন দিনের প্রত্যাশা করি, সেই দিনে কোনো নতুন দল বা গোষ্ঠী যেন মানবতাবিরোধী-গণহত্যাকারী হিসেবে গড়ে না ওঠে তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে যে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে, অনেকে বলছেন নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার সম্পন্ন করবে। আমরা মনে করি, এই কথার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকের উপর সংস্কারের দায়িত্বভার অর্পণ করে সংস্কারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, সামনের দিনে যে সরকারই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুক না কেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার পরে আবারও জুলাই সনদের ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ সেই দলকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময় বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরও বিদেশে চক্রান্তকারী এবং দেশের অভ্যন্তরের আওয়ামী দোসররা নানাভাবে দেশের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনোভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে না। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের ওপর আমাদের শপথ নিতে হবে আমরা যেন ফ্যাসিবাদী দানবকে থামাতে পারি।

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নানা আলোচনা হতেই পারে, নানা কথা উঠতেই পারে। কিন্তু সততা, ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে মৌলিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই একমত হবে।

এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। আমরা নির্বাচনের পক্ষে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছি। তবে সেই নির্বাচন যেন চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করার পরে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলাদেশে আর কখনো এমন কোনো দুঃশাসনের সময় ফিরে না আসে, যেখানে মানুষের জীবন দিয়ে রাজপথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আজকের এই দিনে আমরা উপস্থিত হয়েছি। সেই অভ্যুত্থানকে যদি বাস্তবিক অর্থে পূর্ণতা দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গঠন করতে হবে। বর্তমান কাঠামোতে একজন প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যার ফলে তিনি স্বৈরশাসকে পরিণত হওয়ার সুযোগ পান।

আমরা চাই, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন এমনভাবে পুনর্গঠিত হোক, যাতে স্বৈরতান্ত্রিক ও কুক্ষিগত শাসনের মানসিকতা কোনোভাবে প্রাধান্য না পায়। আইনি কাঠামো ও সংবিধানে যদি প্রকৃত গণতন্ত্রের আবাস থাকে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয় এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় তাহলে যেকোনো শাসকগোষ্ঠী স্বৈরতন্ত্রের পথে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবেন এবং জনগণ তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সক্ষম হবেন। আমরা চাই, বাংলাদেশ এক ব্যক্তির শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে উন্নতি করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের হতাশা ও আফসোস রয়েছে। যে বিচারালয় নাগরিকদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল, সেই বিচারালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে দলীয় দাসত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিরা বিচারপতির আসনে বসেন। আমরা বলেছি, বিচারালয়ে যেন কেউ দলীয় প্রধানভুক্ত হয়ে নয়, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন—সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ডিএইচবি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।