ঢাকা: জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর কার্যকরীভাবে দেশ শাসনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এই সময় তিনি যেসব অবদান রেখে গেছেন, গত ৪৪ বছরেও আমরা তা অর্জন করতে পারিনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, বিগত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল। কারণ মানুষ শিক্ষিত হলে সরকারকে প্রশ্ন করবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত জিয়াউর রহমানের শিক্ষাদর্শন ও কর্মসূচি শীর্ষক সেমিনারে মঈন খান এ কথা বলেন।
সেমিনারে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
মঈন খান বলেন, একবার টিএসসিতে ছাত্রলীগের তৎকালীন এক তুখোড় বক্তা জিয়াউর রহমানের সামনে তার সমালোচনা করেন। তার বক্তব্য শেষে জিয়াউর রহমান তাকে বললেন, আপনি চাইলে আরও কিছু যোগ করতে পারেন। অথচ গত ১৫ বছরে আমরা যে শাসন দেখেছি, তখন এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটলে কী পরিণাম হতো।
আরেকটি ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, একদিন জিয়াউর রহমান আমাদের কয়েকজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিজ্ঞানীকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। সেদিন তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি সমস্যা চিহ্নিত করেন। জিয়াউর রহমান উৎপাদনের রাজনীতির কথা বলতেন। যে রূপপুর নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করছি, সেটি তিনি তখন আলোচনা করেছিলেন। আমাদের কথা তিনি কাগজে নোট নিয়েছিলেন।
মঈন খান বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশ। তারা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র কিংবা অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে শক্তিধর দেশ হয়নি। বরং তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সামরিক শাসন এসেছে। অনেক দেশেই একচ্ছত্রভাবে রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনার সময়ে আমরা দেখেছি, সমাজ ও তার আশপাশের অনেক কিছুর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ও এই আক্রমণের বাইরে ছিল না।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের শিক্ষা চিন্তা বাস্তব ও নিখাদ ছিল। তিনি দেশের অর্থনীতিতে একটি শৃঙ্খলা নিয়ে এসেছিলেন। শূন্য থেকে একটি জাতি তৈরি করেছেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশে ভারত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি ছিল। তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে স্বাধীন করতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন প্রতিবেশী একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে টিকতে হলে তাকে অন্য আরেকটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। তাই তিনি চীনের কাছে গিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমান সম্পর্কে একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার জিয়াউর রহমান ছাত্রনেতাদের নিয়ে একটি সভায় বসলেন। তখন এক ছাত্রনেতা উৎসাহী হয়ে তাকে বললেন, আপনি আজীবন রাষ্ট্রপতি থেকে যান। জবাবে তিনি বলেছিলেন, চামচামি করো না। আমি বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছি। নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্বাচন হবে। জনগণ আমাকে রাখলে আমি থাকব।
মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেও জিয়াউর রহমান ইতস্তত করেননি। আত্মজিজ্ঞাসা থেকেই তিনি বলেছিলেন, উই রিভল্ট।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তার অনিবার্যভাবে সেনাপ্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে উপপ্রধান করা হয়েছিল। সেজন্য তিনি বসে থাকেননি। তখন বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একটি অরাজকতা ছিল। নকল যেন অত্যাবশ্যক ছিল। সে সময় তিনি বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজগুলোর গভর্নিং বডির দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং তিনি সেখানকার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছিলেন।
মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তার উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাপক আবুল ফজল, আবুল অধ্যাপক ইব্রাহীমকে তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা করেছিলেন, অধ্যাপক শামস উল হক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং অধ্যাপক রফিউদ্দিন মাহতাবকে তিনি পরিকল্পনা উপদেষ্টা করেছিলেন। তারা কী দেশের জন্য কোনো অবদান রাখেননি?
জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বারডেমের মতো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তৈরির পেছনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জিয়াউর রহমান। এ ছাড়া শিশু হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ইত্যাদি তিনি করেছিলেন। উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ধারণা তিনি দেন। অনেক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন, যার অনেকগুলো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বন্ধ করে দেন।
মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, অদক্ষ শ্রমিকদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি প্রবাহ তৈরি করেছেন। এমনকি তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস লেখার জন্য কবি হাসান হাফিজুল হককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
সাদা দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, বিগত ১৭ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আওয়ামীকরণ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা করেছিলেন। শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে বেতন বাড়িয়ে মেধাবীদের এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
এফএইচ/আরবি