ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নেতাদের এক টেবিলে পাচ্ছেন না খালেদা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
নেতাদের এক টেবিলে পাচ্ছেন না খালেদা ছবি: বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এক টেবিলে বসার সুযোগই পাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া। দু’টি ‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের পর অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় বেশিরভাগ নেতাকেই থাকতে হচ্ছে কারাগারে।


 
মাঝে মধ্যে দুয়েকজন জামিনে মুক্ত হলেও, বাইরে থাকা নেতাদের নতুন করে ঢুকতে হচ্ছে কারাগারে। কেউবা কারামুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। কেউ আবার কারামুক্তির পর বেছে নিচ্ছেন রাজনীতিমুক্ত নিরিবিলি জীবনযাপন।
 
এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় সারির কয়েকজন নেতাকে দিয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিন্তু সেখানেও দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। তৃতীয় সারির এসব নেতা নির্মোহভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেয়ে নিজেদের জাহির করতে ব্যস্ত।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুদকের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত দেড় বছর ধরে কারাগারে আছেন। অর্থাৎ গত দেড় বছর নীতি নির্ধারণী ফোরামের কোনো বৈঠকে দলের শীর্ষ এ নেতাকে পাননি খালেদা জিয়া।
 
অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন গত ৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে টানা ৬ মাস কারাগারে থাকার পর ১৪ জুলাই জামিনে মুক্তি পান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারামুক্তির কয়দিন পরই চিকিৎসার জন্য চলে যান সিঙ্গাপুরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন তিনি অবস্থান করছেন আমেরিকায়।
 
দলের সাংগঠনিক প্রধান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ছাড়াই এখন কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে বিএনপি প্রধানকে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের অনুপস্থিতির কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গুছিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি।
 
দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত ১৬ জুলাই জামিনে মুক্তি পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। কারামুক্তির দিন গুলশানের বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসেন গয়েশ্বর।
 
এর পর গত ৭ আগস্ট জামিনে মুক্ত পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। কারামুক্তির পরের দিনই গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
 
কারাগারে থাকা এ দুই নেতার মুক্তির কয়েকদিন পরই গত ১৮ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারকে কুমিল্লায় গাড়ি পোড়ানো একটি মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। একই দিন নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে।
 
অর্থাৎ ১৬ জুলাই স্থায়ী কমিটির একজন জামিনে মুক্ত হয়েছেন আর ১৮ আগস্ট স্থায়ী কমিটির আরেকজনকে পাঠানো হয়েছে করাগারে। ৭ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। অন্যদিকে ১৮ আগস্ট চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টাকে আটক করা হয়েছে।
 
এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই আত্মগোপনে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
 
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেলসহ বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মচারিরাও রয়েছেন।   
 
গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল গুলশান অফিস এড়িয়ে চলছেন।
 
অভিমানে দূরে সরে আছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ রয়েছেন দলীয় হিসাব-নিকাষের বাইরে।
 
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, এম শামসুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম ও  সারওয়ারী রহমান বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। এসব শীর্ষ নেতাকে এখন বিএনপির কর্মকাণ্ডে ‘বাতিল’র খাতায় ধরে রাখছেন সবাই।
 
এদিকে কিছু দিন আগে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান মুক্তি পেলেও সম্প্রতি আরেক যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। কারাগারে পাঠানোর সপ্তাহ খানেক আগে গুলশান কার্যালয়ে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন আমান।
 
এদিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা কারাগারের বাইরে থাকলেও এদের অনেকের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থাকায় বুঝে শুনে পা ফেলছেন তারা।
 
নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া গুলশান অফিসে আসছেন না এসব নেতা। ১৫ আগস্ট গুলশান ক‍ার্যালয়ে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটা অনুষ্ঠানে এদের মধ্যে কেবল আ স ম হান্নান শাহ’কে দেখা গেছে।
 
এর আগে গত ১২ আগস্ট গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতাও উপস্থিত ছিলেন। মিটিং চলাকালে গাড়ি পাঠিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে বাসা থেকে নিয়ে আসা হয়।  
 
দলীয় সূত্রে জানা, গেছে, দল গুছিয়ে আন্দোলন কর্মসূচির কথা চিন্তা করলেও শীর্ষ নেতাদের এক টেবিলে বসিয়ে দলের পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণের সুযোগই পাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা, গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন, চিকিৎসার জন্য বিদেশগমন এবং বিভিন্ন মামলায় দফায় দফায় শীর্ষ নেতাদের কারাযাপনে বেকায়দায় পড়েছেন খালেদা জিয়া।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকার আমাদেরকে কোনো স্পেসই দিচ্ছে না। এ জন্য কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে এটাও ঠিক চাপ বাড়লে ডিটার্মিনেশনটাও বাড়ে। আমাদের কোনো কাজ তো থেমে থাকছে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।