ঢাকা: ক্ষমতাসীন দল ও সরকার বিরোধীরা নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। কাউকে কারো ছাড় না দেওয়ার এ প্রবণতায় দেশের মানুষও বিরক্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, একটি ব্যবসায়ী শ্রেণী নতুন শক্তির উত্থানের এই উদ্যোগ নিয়েছে। যারা একত্রিত হয়ে নতুন একটি দল গঠনের ছক কষছে। আর এই ছকের জালে নিজেদের শিবিরে তুলে নিতে চাইছে দেশের সুশীল শ্রেণীর একটি অংশ, সামরিক-বেসামরিক আমলা ও শিক্ষক-ছাত্রদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথমে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে একটি কমন প্লাটফরম তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে তারা। যেখানে বাম রাজনৈতিক বা সমালোচক হিসেবে পরিচিতরা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
উদ্যোক্তাদের মতে, রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে চিন্তা করার কোনো বিকল্প নেই। কেননা, এদের অসহিষ্ণুতার কারণেই গণতন্ত্র ও প্রগতিশীলতা আসেনি। তাই একটি গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা হচ্ছে। সুশীল শ্রেণী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব পেশা ও মতের মানুষদের নিয়ে একটি ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়া হচ্ছে। এই যুক্তফ্রন্ট একটা ফ্রেমের উপরে দাঁড়িয়ে গেলেই দল গঠন করা হবে। যা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে নতুন একটি শক্তি।
সূত্র জানিয়েছে, এ শক্তির উত্থানের জন্য উদ্যোক্তারা প্রতি বুধবার ও রোববার বৈঠক করেন। এতে বাম নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী ও শিক্ষকরা অংশ নেন। গত বুধবারের বৈঠকটি ধানমণ্ডির একটি ভবনের পাঁচ তলায় এক ব্যবসায়ীর অফিসে অনুষ্ঠিত হয়। আর রোববারের বৈঠকটি সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তার বনানীর বাসায় অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক ওই কর্মকর্তা সম্প্রতি স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নতুন শক্তি উত্থানে উদ্যোক্তারা বর্তমান সময়ে একটি ফোরামের ব্যানারে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
ফোরামটির আহ্বায়ক কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, আপাতত আমরা বৈঠকগুলো করছি। এর মধ্য দিয়ে একটা ভয়েজ রেইজের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে দল গঠন করা হবে। যেখানে যে কেউ থাকতে পারবেন। সমমনা সবার সঙ্গেই কথা হচ্ছে, যারাই আসতে চাইবেন তাদের জন্যই সাধুবাদ থাকবে।
আগেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি বলয়ের বাইরে শক্তিশালী দল গঠনের কথা শোনা গেলেও সে প্রচেষ্টা আর সফল হয়নি। তাই বুঝেশুনেই এগুচ্ছেন তারা। সবকিছু ঠিকঠাকের পর গুছিয়ে উঠতে পারলেই শক্তিশালী একটি দল আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন ফোরামটির ওই সদস্য।
নতুন রাজনৈতিক দল বা জোটের প্রাসঙ্গিকতা প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এমন কিছু শুনিনি। তবে হতেও পারে। এরকম খবর উড়িয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজনীতিতে আমরা বিকল্প চাই। তাই নতুন কোনো রাজনৈতিক শক্তি হলে ভালো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০ দলীয় জোট নবম সংসদের আড়াই বছরের মাথায় আন্দোলনে যায়। এদিকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আদালত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ২০১৩ সালে ফাঁসির রায় দিলে তাণ্ডব শুরু করে জামায়াত-শিবির। বিএনপির আন্দোলনের মাঝেই সে তাণ্ডবে দেশের পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় চলে আসে দশম সংসদ নির্বাচন।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ায় সরকার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জঙ্গি আন্দোলনও শুরু হয়। এ আন্দোলনের রেশ থেকে যায় ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও, বেশ কিছু হরতালের পর অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন খালেদা জিয়া। এতে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। অবশেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়।
সম্প্রতি দল পুনঃগঠন করে আবারো আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পঁচাত্তরের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থায় নতুন শক্তির উত্থানের গুঞ্জন রাজনীতির মাঠে নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫
ইইউডি/জেডএম