ঢাকা: গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী। দলের প্রভাবশালী এই ফোরামটি বলতে গেলে বর্তমানে একেবারেই নিষ্ক্রিয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এই ফোরামের সভাও মাত্র দুই একটি হয়েছে বলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা জানান।
সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে তা এই ফোরামের সদস্যদের অনেকে বলতেই পারেন না। তবে দলের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এই ফোরামের সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলী যে কোনো বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সভাপতিমণ্ডলীতে সিদ্ধান্তের পর তা কার্যনির্বাহী কমিটিতে পাশ করানো হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ এর খ-ধারা অনুযায়ী কার্যনির্বাহী সংসদ বা কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে জরুরি ও অতি গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সাধারণত দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ সম্পাদক তিন দিনের নোটিশে সভাপতিমণ্ডলীর সভা আহ্বান করতে পারেন। তবে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে জরুরি সভা যেকোনো সময় ডাকা যায়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতো আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী। যে কোনো সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সভাপতিমণ্ডলী।
তবে গত ২০০৯ সালের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্ব ও কার্যক্রম ধীরে ধীরে কমতে থাকে বলে নেতারা মন্তব্য করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত বর্তমান সভাপতিমণ্ডলী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। দুই একটি সভার পর গত প্রায় আড়াই বছরে এই ফোরামের আর কোনো সভা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার (৫ জানুয়ারি ২০১৪) গঠনের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কোনো সভা হয়নি। কী কারণে হচ্ছে না জানি না।
সভাপতিমণ্ডলীর সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে সেটাও তিনি বলতে পারেননি। তবে গত কাউন্সিলের (২৯ ডিসেম্বর ২০১২) পর দুই একটি সভা হয়ে থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন কাজী জাফরুল্লাহ।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিন হলো সভাপতিমণ্ডলীর সভা হয় না। কী কারণে সভা হয় না আমি জানি না। সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে তা মনে নেই।
এদিকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ছাড়া অন্যান্য কমিটির সভাও অনিয়মিত। দলের থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত উপদেষ্টা পরিষদের সভাও দীর্ঘ দিন ধরে হয় না। সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে তা জানতে এই ফোরামের দুই একজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তা জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দিন সভা হয় না। দলের সভাপতি মনে করলে উপদেষ্টা পরিষদের সভা ডাকতে পারেন। সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে আমার মনে নেই।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভাও দীর্ঘ দিন হয় না। ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কমিটির সর্বশেষ সভা। এ ফোরামটিরও আর কোনো সভা হয়নি গত তিন বছরে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ৬ মাস পর পর এই ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এদিকে গত দুই দফায় দলের জাতীয় সম্মেলন যথা সময়ে হলেও অন্যান্য স্তরের কমিটিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও কাউন্সিল হয়নি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনও নতুন কমিটি গঠন হয়নি। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে আওয়ামী লীগের গত মেয়াদের জাতীয় সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি মেয়াদেও যথাসময়ে (ডিসেম্বরে) কাউন্সিল করার ঘোষণা দেওয়া আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ/