ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর করা আবেদনের শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়।
২০ অক্টোবর অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে এ দুটি আবেদন উপস্থাপন করা হবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। এ কারণে দ্রুত রিভিউ শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানানো হয়েছে।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগে পৃথকভাবে আবেদন দু’টি করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী।
মোট ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন মুজাহিদ। রিভিউয়ের পেপারবুক দাখিল করা হয়েছে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার। অন্যদিকে সাকা চৌধুরী তার মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন।
দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন দু’টির শুনানিতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল মামলাগুলোর মতোই এ শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।
সুপ্রিম কোর্টে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অবকাশকালীন ছুটি চলছে, শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। তাই অবকাশকালীন সময়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে কি-না সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির।
আগামী মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি বসবেন। খুব সম্ভবত ওইদিনই রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারিত হতে পারে বলেও মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।
নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেছেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী।
যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
ইএস/এএসআর