ঢাকা: সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া কিছু চাঞ্চল্যকর বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই শিবিরকর্মী। তারা ছাত্রশিবির থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মনিরুল ইসলাম বলেন, শিবিরের কিছু ছাত্র আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে এ ধরনের অপরাধ করছেন। তারাই জেএমবির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অর্থের যোগান দিয়ে আসছেন।
তিনি জানান, জেএমবি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং টেকনোজিস্টদের গুরুত্ব সহকারে তাদের দলে স্বাগত জানায়। আমাদের হাতে থাকা তথ্য অনুসারে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তারা জেএমবির নেটওয়ার্কে যোগ দিচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের জেএমবির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে আসছে।
হোসেনি দালানে বোমা হামলা
পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনায় আটককৃত পাঁচজন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলেও জানান তিনি।
মনিরুল ইসলাম জানান, হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনায় ৫ জন্য সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আলবানি ওরফে হোজ্জা ভাই ওরফে মেম্বার ভাই ওরফে মাহফুজ ওরফে শাহাদাত। তিনি বুধবার (২৫ নভেম্বর) দিবাগত রাতে দারুস সালাম থানার দ্বীপনগর বালুর মাঠ এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মনিরুল জানান, এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন আরেক আসামি কবির হোসেন ওরফে রাসেদ ওরফে আশিক। বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাকে কামরাঙ্গীরচর থেকে আটক করা হয়। তিনি জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াড (আত্মঘাতি সদস্য) হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত চাঁন মিয়া গাড়ি চালিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করাতেন।
গ্রেফতারকৃত অন্য দুই আসামি মো. ফারুক ওরফে মানিক ওরফে মো. শাহজালাল ও হাফেজ ক্বারি আহসান উল্লাহ মাহমুদ ওই ঘটনায় বাসাভাড়া, আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের শিয়াদের ওপর হামলা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। তবে মোহাম্মদপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা বোঝেন যে, শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় মিলনস্থল হোসনি দালান। তাই তারা স্থান পরিবর্তন করে এ বোমা হামলা চালান।
গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনার দিন কবরস্থানের ভেতর থেকে ৫টি গ্রেনেড ছোড়া হয়। এ গ্রেনেড ছোড়ার কাজটি করেন ঘটনাস্থলে নিহত শাহাদাত। কবিরসহ অন্য ৪ জনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও তাদের কাছ থেকে আরো ৩ জনের নাম জানা গেছে। যাদের দু’জন সুইসাইড স্কোয়াড (আত্মঘাতি সদস্য) হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অন্যজন জেএমবির সহযোগী সদস্য।
যুগ্ম কমিশনার জানান, আসামিদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা হোসেনি দালানের পুরো ঘটনাটি ভিডিও করতে চেয়েছিলেন। তবে আলোর স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যাকাণ্ড
মনিরুল ইসলাম জানান, মূলত পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া এবং নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আশুলিয়া চেকপোস্টে পুলিশ সদস্য ইব্রাহীমকে হত্যা করেছেন তারা। ওইদিন গাজীপুরের শালবন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় আসার পথে এএসআই ইব্রাহীমকে হত্যা করেন তারা।
তিনি জানান, এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি অংশ নেন নিহত শাহাদাত ও অপর একজন জেএমবি নেতা। শাহাদাত মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তার সঙ্গে ছিলেন অপর একজন জেএমবি সদস্য। তাকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো জানান, এর আগে আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেনকেও হত্যা করেন নিহত শাহাদাত। সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, হত্যার পর হত্যাকারীদের একজন তাদের কাছে পানি পান করতে চান। তার দুহাতে ঘাঁ ছিল। নিহত শাহাদাতের দু’হাতে সেই ঘাঁয়ের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার সঙ্গেও শাহাদাত জড়িত ছিলেন।
এছাড়াও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন শাহাদাত। পুলিশের ভাষ্যমতে, খিজির খানের গলায় যে ছুরি চালানো হয় সেটি ছিল গেরিলা ছুরি।
তিনি আরো জানান, জেএমবি মূলত দু’টি গ্রুপে বিভক্ত। একটি জেলে থাকা মাওলানা সাইদুর রহমানের গ্রুপ আর অন্যটি এইগ্রুপ। এ বছরের শুরুতে এই গ্রুপটি নতুনভাবে সংগঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
জেডএফ/এএসআর