ঢাকা: রাজনৈতিক সংগঠন থেকে এবার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে গণসংহতি আন্দোলন।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে দলটির ৩য় জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের আলোচনা সভায় বক্তাদের বক্তব্যে এমনটাই প্রতীয়মান হয়।
সংগঠনের ১৩ বছর পূর্তিতে তিনদিন ব্যাপী ৩য় জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের প্রথম দিনে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিনে কাউন্সিল অধিবেশন ও নীতিনির্ধারণী বৈঠক এবং সমাপনী।
প্রথমদিনের আলোচনা সভায় সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইতিহাসবিদ আহমেদ কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আকতার হোসেনসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সভায় বক্তারা দেশের সংকটের চিত্র তুলে ধরে পরিবর্তনের আভাস দেন। আর এই পরিবর্তনে বিএনপি-জামায়াত বিকল্প হিসেবে নয়, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য জনগণের শক্তি হিসেবে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সেজন্য সাংগঠনিক কাঠামো দরকার হবে বলে মনে করেন তারা।
এজন্য আগামী দুইদিনে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা পর্যালোচনা করে অবস্থান ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও অসাম্প্রদায়িক সার্বভৌম গণতান্ত্রিক পরিবেশ পাইনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার আলোকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান ও সে আলোকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে উঠবার কথা ছিল, হয়নি। আমাদের সেটা করতে হবে। সে লক্ষ্যে জনগণের শক্তি হিসেবে গণসংহতি আন্দোলন একটি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ইসলামী জঙ্গিবাদের নামে বিশ্বব্যাপী আমেরিকার দখলদারিত্ব চলছে। বাংলাদেশেও তাদের যুদ্ধ সন্ত্রাস প্রবেশ করছে। কারণ এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বাংলাদেশকে বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। গণতন্ত্র খর্ব করে মানুষের অধিকার হরণ করেছে। সমাজে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে গণতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে। তারা এই বিচার ছাড়া সব কিছুই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে করছে।
তিনি বলেন, একটা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। আর এর জন্য দরকার হয় গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সরকার সেটা নষ্ট করেছে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের একমাত্র স্লোগান ছিল এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আজকে আমাদের আন্দোলনের স্লোগান হলো; এবারের সংগ্রাম গণতন্ত্রের সংগ্রাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা যে সংকটে আছি, প্রতিদিন উপলব্ধি করছি। মূল সমস্যা হলো- শ্রেণী সম্পর্ক ও বৈষম্য। ব্রিটিশরা আমাদের যে সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে গেছে, সেটা এখনও বিদ্যমান। এ ব্যবস্থা বদলানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এ জন্য সমাজ বিপ্লব ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে সামজ ও রাষ্ট্রে চরিত্র বদলানো যাবে না।
গণতান্ত্রিক বামমোর্চার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, সমাজে প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে, প্রয়োজন ধাত্রীর। সঠিক সময়ে জনগণের ধাত্রী হলে বেশিদিন টিকতে পারবে না সাম্রাজ্যবাদের সহায়ক মহাজোট সরকার। বামমোর্চার শক্তি বৃদ্ধি হলে তাদের সঠিক জবাব দিতে পারবো।
এর আগে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা একটি র্যালি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইইবি চত্বরে এসে মিলিত হয়। সেখানে জাতীয় ও সংগ্রামের প্রতীক লাল পতাকা উত্তোলন করে ২য় জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। পরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এসইউজে/আরআই