ঢাকা: ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক বিএনপি প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ভীতিকর পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি করে বিএনপি প্রার্থীদের বিজয় নৎসাত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত করানোর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ইসি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি মানা হয়নি।
বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের কোনো বৈধতা নেই। বিরোধী দলের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এর আগে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণা চলা অবস্থায় দলীয় প্রার্থীদের একের পর এক পরাজয়ের খবরের মধ্যে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন খালেদা জিয়া।
ওই বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সরকার নীল নকশা বাস্তবায়নের কারণে নজিরবিহীন সন্ত্রাস, ব্যালট ছিনতাই, বিএনপির নির্বাচনী এজেন্ট ও প্রার্থীদের ওপর হামলা, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্ব, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও ব্যার্থতার কারণে জনগণ এই নির্বাচনে অবাধে তাদের ভোট দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি কলঙ্কজনক নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ নির্বাচন এ কথাই প্রমাণ করে এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন-ই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।
এর পরও কি এ সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে বিএনপি-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা তো বলেছি, সব নির্বাচনেই অংশ নেবে বিএনপি।
নির্বাচন থেকে বিএনপির অর্জন কী-? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি-এটিই আমাদের বড় অর্জন।
বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের ফলও প্রত্যাখ্যান করছেন কি না-? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, সব ফলই আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
কর্মসূচির ব্যাপারে তিনি বলেন, কোনো কর্মসূচি নেওয়া হলে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, জোট নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ প্রচার সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় একযোগে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। দেশে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা মাত্র ২২টি পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ১৭৭টি পৌরসভার মেয়র পদে জয়ী হন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এজেড/আরআই