ঢাকা: হাইকোর্টের রায়ে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ। সে সময় তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিকেও অবৈধ গণ্য করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি এও বলেছেন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন।
একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি সচিবের মর্যাদা চাইলে শিক্ষকতা ছেড়ে সচিব হবেন কিনা তা ভেবে দেখার বিষয় বলেও মনে করেন তিনি।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
হাইকোর্টের রায় ও জিয়াউর রহমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়ার ক্ষমতা দখল যে সম্পূর্ণ অবৈধ, অসাংবিধানিক, উচ্চ আদালত সে রায় দিয়েছেন। সে রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়- জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ ছিল। কাজেই তিনি যা যা করে গেছেন সব অবৈধ। ক্ষমতায় গিয়ে জিয়াউর রহমান যে দল গঠন করেছেন সেটাও অবৈধ বলে গণ্য করা দরকার। জিয়াকে কখনোই রাষ্ট্রপতি বলার অধিকার নেই। তা না হলে হাইকোর্টের রায় মানা হবে না।
![](files/January2016/January11/Al_Metting_DU_Area_183239834.jpg)
পে-স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১২৩ভাগ বেতন বাড়ানো হয়েছে। কোনো সমস্যা থাকলে সেটি আমরা দেখবো। কিন্তু ক্লাস বন্ধ করবেন না। ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ করলে তারা তা মানবে না।
‘ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল রাখুন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে সম্মান আদায় করা শিক্ষকদের মানায় না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা অনেক উপরে। তারা সচিবের মর্যাদা চাইবেন কেন? আমি প্রধানমন্ত্রী- আমার শিক্ষক আনিসুজ্জামান স্যার, রফিক স্যার। আমি আমার শিক্ষকদের শিক্ষক হিসেবে সম্মান করি। তাদের মর্যাদা সচিবের সঙ্গে তুলনা হয় না। মর্যাদাবোধ নিজেদের মধ্যেও থাকতে হবে।
শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে তাদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করেছি। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের ৫৯বছর। তবে কী এখন শিক্ষকদের বয়স কমিয়ে দেওয়া হবে!
বিডিআর বিদ্রোহ এবং খালেদা জিয়া
বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের দুই মাসের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ হয়। শুধু পিলখানায় নয়; সমগ্র বাংলাদেশে সেই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
![](files/January2016/January10/PM00_323583129.jpg)
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তখন ক্যান্টনমেন্টের বাসায় থাকতেন, বিডিআর বিদ্রোহ ৯টার দিকে শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৭/৮টর মধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে উনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন? কেন গেলেন, এর জবাব জনগণকে দিতে হবে। এতে প্রমাণিত হয় বিদ্রোহের সঙ্গে তার যোগসূত্র ছিল।
‘তার পুত্র তারেক লন্ডন সময় রাত ১-২টার মধ্যে ৪৫ বার ফোন করে মাকে (খালেদা) বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কেন তার মাকে বাসা থেকে বের হতে বলেছিলেন? তারও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। হাইকোর্টে এই হত্যা মামলার বিচার চলছে। ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন একদিন করবো। ’
সরকারের উন্নয়ন চিত্র
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুরে ধরে বলেন, আমরা জনগণের কাছে যে কথা দিয়েছি সে কথা রক্ষা করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। অনেক ষড়যন্ত্র অনেক চক্রান্ত ছিল কিংবা আছে-কিন্তু কোনো চক্রান্ত এ বিচার আর থামাতে পারবে না। কারণ দেশের মানুষ এখন সচেতন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সহিংস কর্মকাণ্ড ও মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে ধিক্কার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের দিকে। উন্নয়নে মানুষের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু একটি শ্রেণী ও তাদের দোসরদের এবং তাদের নেত্রীর মনে শান্তি আসেনি।
‘তাই তিনি মানুষ হত্যা করছেন। মানুষ এমন নির্মমতা আর দেখেনি। বাসে মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষ হত্যা করা এসব মানুষ দেখেনি। তাই তো এবার পৌর নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে। নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করে না, করেও নি,’ বলেন শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কত বড় দুঃসাহস, যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন সেই শহীদদের নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি (খালেদা) বলেছেন- এতো মানুষ নাকি মারা যায়নি। অর্থাৎ ওনার পেয়ারে পাকিস্তান যেটি বলবে সেটিই গ্রহণযোগ্য। আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মানুষ যেটি সত্য বলে জেনেছে সেটি সত্য না! সে জন্যই বোধহয় উনি মানুষ হত্যা শুরু করে দিলেন।
বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতি ও অপকর্মের কারণে ২০০৭ সালে এক এগারোর সৃষ্টি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তাদের হাত থেকে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা কিছুই রেহাই পায়নি। তারা পাক হানাদার বাহিনীর মতো মানুষের অত্যাচার শুরু করে। ২১ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তারা।
ভোট ও ভোটার প্রসঙ্গ
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া আজকে ভোট নিয়ে কথা বলেন। তাকে জিজ্ঞেস করি তার স্বামী জিয়াউর রহমান যে নির্বাচন করেছিলেন হ্যাঁ/না ভোটের, সেখানে ১১০ শতাংশ হ্যাঁ ভোট পড়েছিল। কোনো না ভোট পড়েনি। তিনি নিজে ১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় যান। জনগণ তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়েছিল। উনার বোধহয় সেসব কথা স্মরণ নেই।
![](files/January2016/January11/Al_Metting_DU_Area__4__108695627.jpg)
ঢাকা যানজট ও মেট্রোরেল
ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যানজট দেখলে আমি খুশি হই, দুঃখ পাই না। মানুষের আয় বেড়েছে তারা গাড়িতে চলাফেরা করছে। যানজট নিরসনে উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন। একটি স্টেশন আমরা ইচ্ছা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখেছি যাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হয়। মাত্র ১৪/১৫ মিনিটে উত্তরা থেকে আসা যাবে। মেট্রোরেল ওপর দিয়ে যাবে, মাটির নিচ দিয়ে না। আধুনিক প্রযুক্তিতে মেট্রোরেলের যেখানে-যেখানে, প্রয়োজন সেখানে সাউন্ড প্রুফ করা হবে।
তিনি বলেন, দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী মেট্রোরেল নিয়ে আন্দোলন করছেন। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রোরেল নিয়ে আন্দোলন করছে তারা কেন করছে? এটি নিয়ে হঠাৎ উত্তেজনার কোনো কারণ নেই। জ্যামে বসে থাকবে নাকি মেট্রোরেলে সাঁই সাঁই করে আসা-যাওয়া করে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবে?
‘অবশ্য এক শ্রেণীর লোক আছে যারা যে কোনো কিছুতেই দোষ খোঁজেন। উন্নয়নের কাজে বাধা দেন। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সুন্দরবন গেলো বলে আন্দোলন করেছেন। আমরা বলেছি- সেখানে গিয়ে দেখে আসেন আসল অবস্থা। কিসে দেশের মানুষের কল্যাণ সেটুকু জ্ঞান আমাদের রয়েছে। দয়া করে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করবেন না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য কমিয়ে ২২ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। দেশের বৈদাশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। দেশ নিম্ব মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আগামীতে আমরা ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেটের কথা আমরা ভাবছি। আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো ২০২১ সালেই।
‘জ্বালাও-পোড়াও করে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। দেশের মানুষ সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছে। বাধা দিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে চাইলে তা বরদাস্ত করা হবে না,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
এসকে/এমইউএম/আইএ/এমএ
** ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করবেন না
** ‘যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর’
** বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেই স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়
** ‘খালেদা লাইন বদলাইছেন’
** ১০ জানুয়ারি বাঙালির ঐতিহাসিক দিন
** হাসিনাকে আরও কয়েক টার্ম প্রধানমন্ত্রী হওয়া দরকার
** আওয়ামী লীগের জনসভা শুরু, সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রী
** সাভার ছেড়েছে সহস্রাধিক বাস-মিনিবাস