ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

কাদের কো-চেয়ারম্যান

এরশাদের সিদ্ধান্তে সংকটে জাপা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এরশাদের সিদ্ধান্তে সংকটে জাপা

ঢাকা: পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আকস্মিক সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

রোববার (১৭ জানুয়ারি) রংপুরে এক কর্মী সম্মেলনে জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ।

একই দিন সন্ধ্যায় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে আহ্বায়ক এবং এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়।
 
এ ঘোষণার পর থেকেই পার্টির ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বলছেন, আবার গ্রুপিং চাঙ্গা হয়ে উঠবে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে এভাবে ক্ষমতাহীন করার প্রক্রিয়া একটি গ্রুপ সহজভাবে নেবে না। অন্যদিকে জিএম কাদের প্রশ্নে রওশন এরশাদ বেকে বসতে পারেন। আর রওশন এরশাদ বেকে বসলে দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা কঠিন হবে এরশাদের জন্য। কারণ, বেশিরভাগ এমপি এখনও রওশন এরশাদের সঙ্গে রয়েছেন।
 
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে রওশন এরশাদের বাসায় একটি গোপন বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। একটি গ্রুপ চাইছেন, রওশন এরশাদকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানাতে। রওশন এরশাদের সায় পেলে তারা পাল্টা কমিটি করতে চান। এতে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্যদের বেশিরভাগের সায় রয়েছে।
 
আবার সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব করায় দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার চৌদ্দ বছর জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন। সারা দেশে টাকার বিনিময়ে কমিটি করতেন। এছাড়া বিগত নির্বাচনে দলের সঙ্গে বেঈমানি করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। হাওলাদার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে মীরজাফর হিসেবে পরিচিত।
 
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, বিগত নির্বাচনের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তাদের সব মুভমেন্ট ছিল নির্বাচনের পক্ষে।
 
আর তখন এরশাদের নির্বাচন বর্জনের পক্ষে অবস্থান নেন তৎকালীন মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।

এমনকি এরশাদকে যেদিন (২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করান সেদিনও হাওলাদারের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। এরশাদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন হাওলাদার। সেখানে হাওলাদার ছাড়াও এরশাদের ভাই প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের ও কাজী ফিরোজ রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
 
সেদিনও হাওলাদার বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না। আপনারা সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিন। হাওলাদারের সেই বক্তব্যের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির লোকজন অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু হাওলাদার নিজে ও তার স্ত্রী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার থেকে বিরত থাকেন। এমনকি তার স্ত্রী রত্না আমিন হাওলাদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাহলে তাকে মীরজাফর না বলে কি বলা উচিত!
 
হাওলাদার অন্যদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজে নির্বাচন করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।   যে কারণে জাপার নেতাকর্মীরা হাওলাদারকে পছন্দ করেন না বলে জানান জাতীয় পার্টির ওই নেতা।
 
জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলানিউজকে জানান, হাওলাদার জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। জেলা কমিটির অনুমোদন দিতেন টাকা নিয়ে। অনেক জেলায় একাধিক কমিটিকে গোপনে মদদ দিতেন তিনি। খোদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার বিষয়ে অবগত। তাকে কেন এই পদে বসানো হলো তা বুঝতে পারছেন না তারা।
 
অপর এক নেতা জানিয়েছেন, এরশাদকে যখন বাসা থেকে নিয়ে যান গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন, তখন নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। এতে কয়েকজন আহত হন। আর হাওলাদার সেখানে উপস্থিত থাকলেও নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে আগেই সটকে পড়েন।
 
সেদিন মধ্য রাতে সিএমএইচ থেকে বাসায় ফিরে রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম বলেছিলেন, স্যার অসুস্থ তাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেউ তাকে নিয়ে যাননি। তার এ কথার অর্থ কি? তাহলে জাপার কর্মীদের সেদিন কে মেরেছিলো?
 
রহুল আমিন হাওলাদারকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব করার এ সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টির মধ্যে আবার গ্রুপিং চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে রওশন গ্রুপের সঙ্গে এরশাদ গ্রুপের শীতল সম্পর্ক আবার উষ্ণ হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন সিনিয়র নেতারা।
 
জাতীয় পার্টির একজন যুগ্ম মহাসচিব বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বাবলুও (বর্তমান মহাসচিব) ‘সরকারের দালাল’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বাবলু দায়িত্ব পাওয়ার পর ১৮টি জেলায় সম্মেলন করেছেন। কোথাও থেকে টাকা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আর হাওলাদার টাকা ছাড়া কোনো কমিটি পাস করেননি।
 
অন্যদিকে জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি হলেও সিনিয়র নেতারা অনেকেই নাখোশ বলে জানা গেছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান পদ নেই। আর কাউকে কো-চেয়ারম্যান করতে হলে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আলোচনা করতে হবে। হুসেইন মুহম্মদ এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
 
জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর(দক্ষিণ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল বাংলানিউজকে বলেছেন, জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমর্থন রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।