ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ! রওশন এরশাদ

ঢাকা: জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান করায় বেজায় চটেছেন রওশনপন্থীরা। তারা রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।



জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৩৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

এরশাদের গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রমের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাহলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবস্থান কি হবে। তাকে বহিস্কার করা হয়েছে কি-না। জবাবে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, তিনিও থাকবেন। কেনো এর আগেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।

এক-এগারোর সময় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছিলো। তখন দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

লিখিত বক্তব্যে জাপার মহাসচিব বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন ‍মুহম্মদ এরশাদ এমপি পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, এমনকি দলীয় কোনো ফোরামে কোনো রকম আলোচনা ব্যতিরেকে তার আপন ছোট ভাই জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও তার উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা দেন’।
‘একই সঙ্গে পার্টির সম্মেলনের জন্য জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব ঘোষণা করেছেন। ইহা গঠণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিধিবর্হিভুত। পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বলে এই ঘোষণা দিতে পারেন না। তাই এই ঘোষণা পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে’ বলেও উল্লেখ করেছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

জাতীয় পার্টি কি আবার ভাঙতে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। অনেক দফায় ভাঙনের কারণে ক্ষয়িষ্ণু জাপা এমনিতেই সংকটের মধ্যে রয়েছে। এবার ভাঙলে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

সামরিক শাসকের ‍হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই এরশাদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। দু’একবার যারাই এরশাদের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে গেছেন তাদেরকেই দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক নেতা একাধিক দফায় শোকজ ও সাময়িক বহিস্কারের শিকার হয়েছেন। শো’কজের ক্ষেত্রে এরশাদ ছাড় দেননি আপন ভাই জিএম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদকেও।

গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত এই দলটিকে নানা চড়াই-উৎরাইও পাড়ি দিতে হয়েছে। কয়েক দফায় ভাঙন আর নেতাদের দল ছেড়ে যাওয়ার কারণে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে দলটি। ভোটের সমীকরণেও দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। আসনের সংখ্যায় কিছুটা হেরফের হলেও ভোটের সূচক সব সময় নিম্নগামী।

গণআন্দোলনের মুখে বিদায়ের পর প্রথম ১৯৯১ সালে নির্বাচনে কাস্টিং ভোটের ১১.৯২ শতাংশ পেয়েছিলো জাতীয় পার্টি। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১০.৬৭ শতাংশ, আর ২০০১ সালের ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট পায় ৭.২৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে পেয়েছে মাত্র ৭.০৪ শতাংশ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন অংশ নেয়। কিন্তু যে আসনেই জোট ছাড়া নির্বাচন করেছে সেখানেই ধরাশায়ী দলটির প্রার্থীরা।

জাতীয় পার্টি এর আগে চার দফায় ভাঙনের শিকার হয়েছে। ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুতির পর এরশাদ জেলে প্রথম দফায় পৃথক জাপা গঠন করেন প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদ।   ১৯৯৯ সালে মিজানুর রহমান চৌধুরী-আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নেতৃত্বে গঠন করা হয় পৃথক জাতীয় পার্টি । এরপর নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জাতীয় পার্টি (নাফি)। সর্বশেষ কাজী জাফর আহমেদ’র নেতৃত্বে পাল্টাপাল্টি বহিস্কারের মাধ্যমে আরও একটি জাতীয় পার্টির জন্ম হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসআই/এএসআর

** এরশাদের সিদ্ধান্তে সংকটে জাপা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।