ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ২২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওইদিন হাজিরা না দিলে তার জামিন বাতিল করা হবে বলেও জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এ আদেশ দেন রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালত।
এখন চলছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা।
এ আদালতে চলছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত লিখিত বক্তব্য পাঠের দিন ধার্য ছিল। গত ০১ ডিসেম্বর লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করেন খালেদা। ০৮ ডিসেম্বর অসমাপ্ত বক্তব্য পাঠের দিন ধার্য থাকলেও তার আবেদনে এক সপ্তাহ পিছিয়ে ১৫ ডিসেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত।
তবে আদালতে হাজির হননি খালেদা জিয়া। তার পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আত্মপক্ষ সমর্থন পিছিয়ে আগামী বছরের ০২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে অবকাশকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পরে দিন ধার্যের আবেদন জানান। আবেদনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এছাড়া এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে করা তার আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে, যা অবকাশকালীন ছুটি শেষের আগে হবে না।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এ আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, বিশেষ আদালতের বিশেষ এই দুর্নীতির মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার বিধান রয়েছে। খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলেরও আবেদন জানান তিনি।
পরে এক সপ্তাহ পিছিয়ে আগামী ২২ ডিসেম্বর অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন পুনর্নির্ধারণ করে খালেদাকে হাজিরের নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর অরফানেজ মামলায় হারুন-অর রশিদকে অসমাপ্ত জেরা শুরু করেছেন আসামিপক্ষ।
চ্যারিটেবল মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেছেন জামিনে থাকা দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন।
জামিনে থাকা দুই মামলার আসামিরাও আদালতে উপস্থিত রয়েছেন। তারেক রহমানের পক্ষে হাজিরা দিয়েছেন তার আইনজীবী।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
ইএস/টিআই/এএসআর