ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচণ্ড এক ধাক্কা দিয়েছে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে নাসিক নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল, তা রাতারাতি বদলে গেছে।
এ নির্বাচনের পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ইমেজ’ যেমন উজ্জ্বল হয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্ব’র প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে বিভিন্ন মহল। অনেকের মধ্যে এই ধারণাও জন্মেছে- ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ নেই। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে হয়তো বাজি ধরা লোকের অভাব হবে না!
নাসিক নির্বাচনের একদিন আগে ২০ ডিসেম্বর ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’র (এনডিএ) চেয়ারম্যান শেখ সওকত হোসেন নীলু তার পুরানা পল্টনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, মানুষের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছে, আগামী নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হলেও শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবশিষ্ট কেউ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শেখ শওকত হোসেন নীলু বলেন, এ নিয়ে মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো করে ষড়যন্ত্রকারী কাউকে পাওয়া যাবে না। কারণ, তারা অনেক দূর থেকে কল-কাঠি নাড়ছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেট ছিল আকাশেই প্লেনটাকে ধ্বংস করা। আল্লাহ’র অশেষ রহমতে প্রধানমন্ত্রী ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন।
তিনি বলেন, এখানে যারা তেলে ট্যাংকির নাট খুলেছে, তারা কেবল দায়িত্ব পালন করেছে। যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আমার অভিজ্ঞতা যেটা বলে, সেটা হলো- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকও প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্লেন নিয়ে যেটা করা হয়েছিল, সেটা তার চেয়েও ভয়াবহ। ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ ছিল- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার মধ্য দিয়ে সরকারকে উৎখাত করা।
কিন্তু কেন? নিজের প্রশ্নের জবাব নিজেই দেন শেখ শওকত হোসেন নীলু। তিনি বলেন- শেখ হাসিনা জননেত্রী থেকে রাষ্ট্রনায়কের রূপান্তরিত হয়েছেন। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয় স্বার্থে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কতগুলো বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, সিটমহল সমস্যার সমাধান, অর্থনৈতিক অগ্রগতি সর্বোপরি বিশ্বরাজনৈতিক নেতত্বে শেখ হাসিনার অবস্থান অনেক উপরে। বিষয়টি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
তিনি বলেন, সমকালীন যে দেশগুলো আছে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত- এই চারটিকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের রাষ্ট্রগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্ব’র দিক থেকে শেখ হাসিনা অনেক উপরে উঠে গেছেন।
এখন বাংলাদেশের নেতৃত্ব ইচ্ছা করলেই ভারতের নেতৃত্বর সমান হতে পারবে না। কারণ, ভারতের অর্থনীতি অনেক বড়, সামরিক শক্তি অনেক বড়, ভারতে ভৌগোলিক অবস্থান অনেক বড়। কিন্তু মানবকল্যাণে অভ্যন্তরীণ বিষয় যেগুলো আছে, সেই পয়েন্ট অব ভিউ থেকে যদি দেখি তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ একটা কল্যাণরাষ্ট্রের মডেলের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
দুস্থ মানুষের সেবা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, জন্ম-মৃত্যু হার ও শিক্ষায় সরকারের সহযোগিতার বিষয়গুরো উল্লেখ করে শেখ শওকত হোসেন নীলু বলেন, এসব কারণে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা জন্ম নিয়েছে, আগামী নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হলেও শেখ হাসিনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কেউ নেই। এই বিষয়গুলো শেখ হাসিনার জন্য বহু শত্র জোগাড় করে দিয়েছে। সেই শত্রুরাই এখন অপঘাত সৃষ্টির অভিপ্রায় চালাচ্ছে। এর সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এজেড/পিসি