ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বাড়ি ছাড়বো না: মওদুদ, ছাড়তেই হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৭ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৭
বাড়ি ছাড়বো না: মওদুদ, ছাড়তেই হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল মওদুদ আহমদ ও মাহবুবে আলম

ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের দখলে থাকা বাড়িটি নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন রোববার (০৪ জুন) খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। তবে সে রায়ের পর শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

 

সরকারপক্ষ বলছেন, বাড়িটি এখন ছাড়তেই হবে মওদুদ আহমদকে। আর মওদুদ বলছেন, গুলশানের বাড়িটি তিনি ছাড়বেন না।

রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গনেই ব্যারিস্টার মওদুদ বাংলানিউজের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাড়িটি তিনি ছাড়ছেন না।  

আদালতের রায়ের প্রসঙ্গ টেনেই তিনি বলেন, ‘আদালত কোথাও বলেননি, বাড়িটি সরকারের। আর সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি, ফলে বাড়িটি ছাড়ার প্রশ্ন ওঠে না’।  

মওদুদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তার বোঝাপড়া হবে এর মালিক অস্ট্রিয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের পরিবারের সঙ্গে। সরকারের সঙ্গে নয়।  

আর রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মওদুদ আহমদকে অবশ্যই বাড়িটি ছাড়তে হবে।  

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর মওদুদ আহমদ বাড়ি না ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ায় বিষ্ময় প্রকাশ করেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘তার মতো রাজনৈতিক নেতার এমন কথা বলা রীতিমতো ধৃষ্ঠতা’।

বাংলানিউজকে মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘বাড়ি অবশ্যই ছাড়তে হবে। কারো অবৈধ দখলে থাকলে সরকার তা দেখবে ও দখলমুক্ত করবে। বাড়িটি বর্তমানে নিয়ে নেওয়া সরকারের দায়িত্ব’।
  

তিনি বলেন, ‘মওদুদ আহমদ তার ভাইয়ের নামে বাড়িটির মূল মালিকের সঙ্গে যে চুক্তি দেখিয়েছিলেন, সেটির মামলা আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গিয়েছিলো। রায়ে বলা হয়েছিলো, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং চুক্তিটি জাল-জালিয়াতির মধ্যে হয়েছে। সেটিই মওদুদ আহমদ আহমদ বলতে চান, তার ভাইয়ের আইনজীবী হিসেবে। মহসিন দরবার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাড়িটি নিয়ে চুক্তি হয়েছিলো, যিনি বাংলাদেশে ছিলেন’।

‘আমরা বলেছি, মালিক অস্ট্রিয়ান নাগরিক ইনজে প্লাজ ১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ মারা যান। কথিত মহসিন দরবার ইনজের পক্ষে চুক্তি দেখিয়েছিলেন, যেটি হয়েছে একই বছরের আগস্ট মাসে। তার মানে মালিকের মৃত্যুর ৫ মাস পরে। আর বাড়ি পেতে তারা মামলা করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। বিচারিক আদালত এবং আপিল বিভাগ রাইটলি বলেছেন, তাদের নামে নামজারি হবে না’।

রিভিউয়ের আদেশের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘তাদের অনুরোধে আদালত বলছেন,বিচারে ভুল হয়নি। তবে বিষয়টি দেখবো। এখন অবৈধভাবে একজন লোক থাকবেন আর সরকার সেটি মেনে নেবে, তা হতে পারে না’।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এ মামলায় মওদুদ একটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেখিয়েছিলেন যেখানে তার ভাই তাকে বাড়িটি দেখাশোনা করতে নিয়োগ দিয়েছেন। সুতরাং, সেখানে তার ভাইয়েরও কোনো টাইটেল নেই, অধিকারও নেই। তার মামলা ডিসমিস হয়ে গেছে উচ্চ আদালতে। এ বাড়িতে যে তিনি থাকবেন, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এ কথা বলাতো আমি মনে করি, এর চেয়ে বড় ধৃষ্ঠতা আর হতে পারে না’।
 
বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটি আমরা দেখবো। অন্য যেকোনো দেশে হলে রাজনীতিবিদ এ প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সম্মান রক্ষার্থে বাড়ি ছেড়ে দিতেন’।
 
মূল মালিকের সঙ্গে মওদুদ আহমদের বোঝাপড়ার বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘মালিক তো বিদেশি। স্বাধীনতার পরে আসেননি কোনো সময়েই। এখানে ছিলেনই না। তার এ সমস্ত কথা দুঃখজনক। মূল মালিকের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে মামলায় হেরে গিয়ে এ কথা বলাও দুঃখজনক’।

রিভিউ আবেদন খারিজের পর বাড়ি ছাড়তে হবে কি-না- এ  প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবশ্যই ছাড়তে হবে’।
   

তার আগে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি বিরোধী দলে আছি বলে আজকে এ মামলায় সাত বছর পরে আপিল করেছে সরকার’।

বাড়ি ছাড়তে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানেতো সরকারকে স্বত্ব দেওয়া হয়নি, অধিকার দেওয়া হয়নি। আমরা মূল মালিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করবো। মালিক অস্ট্রিয়ান নাগরিক ইনজে প্লাজ মারা গেছেন, তার ছেলে করিম সুলায়মান বেঁচে আছেন। আর আদালতও কিছু পর্যবেক্ষণ দেবেন’।

যদি সরকার বাড়ি ছাড়তে বলে, তখন কি করবেন প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেন, ‘দেশে কি আইন নেই? আমি আইনের আশ্রয় নেবো, আদালতের আশ্রয় নেবো। বাড়ি ছাড়বো না’।        

গুলশানের ওই বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ছেড়ে চলে যান এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

এরপর ১৯৭৩ সালের ০২ আগস্ট মওদুদ আহমদ তার ইংল্যান্ড প্রবাসী ভাই মনজুর আহমদের নামে একটি ভুয়া আম মোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বাড়ি আত্মসাতের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

পরে এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার রায় দেন হাইকোর্ট।
 
রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে ২০১১ সালের ০৩ ফেব্রুয়ারি।  

২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
 
২০১৪ সালের ০৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন। ওই বছরের ১৪ জুন দুদকের মামলায় অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।  

এর বিরুদ্ধে মওদুদ ও তার ভাইয়ের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ। এরপর গত বছরের ০২ আগস্ট এ আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ।

কিন্তু মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং নামজারি বাতিলে মনজুর আহমদ আপিল বিভাগের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন জানান।
 
গত ৩১ মে দুই পক্ষের রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে ০৪ জুন রোববার আদেশের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।  

কর্মদিবসের প্রথম ভাগেই রিভিউ আবেদন খারিজ করে রায় দেন আপিল বিভাগ।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।