সরকারি দলের নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সমস্যার সমাধানে সরকারের কূটনেতিক তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি জাপানের নিকি এশিয়ান রিভিউ পত্রিকাকে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কিছু শরণার্থীকে ফেরত নিতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। যেকোনো সময় এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থীদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। রাখাইনের সংকট মিয়ানমারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান হতে পারে। এ প্রস্তাবে মিয়ানমারের উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বসতে চান তারা।
গত ২৪ আগস্ট আরাকানের পুলিশ চৌকিতে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান সলভেশন আর্মির (আরসা) হামলার পর থেকেই সহিংসতায় পুড়ছে রাখাইন রাজ্য। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সন্ত্রাসী নিধনের নামে গণহত্যা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নির্যাতনের পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। সেনা সদস্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার হন নারীরা। এরই ফলশ্রুতিতে শুরু হয় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশের জনস্রোত।
জাতিসংঘ ও সরকারের তথ্যমতে, ২৪ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত চলমান ওই সহিংসতায় নতুন করে প্রায় চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। তবে স্থানীয়দের মতে, নতুনদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৫টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার অবস্থান কিছুটা বদলাতে বাধ্য হয়েছে। আর দেশটি এভাবে অগ্রসর হলে সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হতে পারে। এটিকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে উদ্যোগের সূচনা বলেও মনে করেন তারা।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ওআইসি, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে স্থায়ী সমাধানের কথা বলছে তারা।
জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের অর্ধেক সদস্য রাষ্ট্রই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মিশর, সেনেগাল, সুইডেন ও কাজাখস্তান এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের পাবলিক ব্রিফ বা উন্মুক্ত বিবৃতির দাবি জানিয়েছে।
এসব দেশ ও সংস্থার এ অবস্থান ও ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও মনে করছেন নীতিনির্ধারক নেতারা।
তারা জানান, জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সঙ্কটের স্থায়ী নিরসনে মিয়ানমারকে চাপ দিতে সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ইস্যুতে অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালানো হচ্ছে। ফলে এই আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বিশ্ব জনমত গড়ে তুলে এ সমস্যার সমাধান করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেই বসে নেই। তিনি এ ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। আন্তরিকতা, দৃঢ় পদক্ষেপ ও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণে সারা পৃথিবী শেখ হাসিনার পক্ষে। মিয়ানমারের এই অবস্থান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের সূচনা বলেও মনে করি’।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর সারা বিশ্বের চাপ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এর ফলে মিয়ানমার যে বিদেশি বিনিয়োগের নীতি নিয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এটিও তারা বুঝতে পেরেছে। তারা অবস্থান পরিবর্তন করলে তা সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিবাচক হবে’।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের প্রত্যেকটি ফোরামে যে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তার ফলে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিষয়গুলো এসেছে। এটি কূটনৈতিক তৎপরতারই প্রতিফলন’।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এসকে/এএসআর