কিন্তু বর্তমানের চিত্রটা একেবারে ভিন্ন। জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়ে বগুড়ায় মাঠে নেই জামায়াত।
উল্টো হরতালের ডাক দেওয়ার পরপরই বুধবার (১১ অক্টোবর) গা ঢাকা দেয় দলের নেতাকর্মীরা। বিকেলের পর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা নিরাপদে চলে যায়। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দলটির কাউকে আটক করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য জানা যায়।
সূত্রগুলো জানায়, বিগত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় জামায়াতের নেতারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়নের চেয়াম্যান ও মেম্বার নির্বাচিত হন। নির্বাচিত সব উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছেন।
পরে জামিনে বেরিয়ে বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যানরা অনেকটা বীরদর্পে চলাচল শুরু করেন। তারা আবারো দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে পড়েন।
তবে দলের পক্ষ থেকে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার পর বুধবার থেকে শিবগঞ্জ, শেরপুর, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জামায়াত সমর্থিত অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা পুরোপুরি গা ঢাকা দিয়েছেন। একইভাবে দলের অন্য নেতাকর্মীরাও চলে গেছেন আড়ালে। পুলিশি গ্রেফতার এড়াতেই দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা হরতালের মাঠ ছেড়ে নিরাপদে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
জামায়াতের ডাকা হরতালের মাঠে সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন দেখা যায়। ভোর থেকেই ঘুরছে গাড়ির চাকা। খুলেছে ব্যাংক, বিমা, অফিস, আদালত, ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিনের ন্যায় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে।
বেলা ১১ টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত জেলার কোথাও থেকে পিকেটিং বা মিছিল করার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে হরতালে যে কোন ধরনের নাশকতারোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সাঁজোয়া যান ও জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশের পাশাপাশি ৠাবের বাড়তি টহল দলকে টহল দিতে দেখা যায়।
শহরের ঠনটনিয়ায় অবস্থিত আন্তঃজেলা কোচ টার্মিনাল ও চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নির্ধারিত সময়ে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসগুলো ছেড়ে যায়। আবার দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাসগুলো প্রতিদিনের ন্যায় এসব টার্মিনালে প্রবেশ করে। ট্রাকের চলাচলও ছিলো স্বাভাবিক।
এছাড়া স্থানীয় রুটগুলোতে বাস, ট্রাক, সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।
জেলার মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, হরতালে যে কোন ধরনের নাশকতা ঠেকাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মাঠে রয়েছে। পাশাপাশি র্যাবও তাদের টহল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে তিন শতাধিক বাড়তি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এখনো পর্যন্ত কোথাও থেকে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আসেনি যোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআই