তিনি বলেন, বড়বড় অনুষ্ঠান করে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কাছে সরকারি চিঠি পাঠানো হয়, অনুষ্ঠানে আসতে হবে। তা না হলে স্কুলের উন্নয়ন বন্ধ হবে, চাকরি চলে যাবে।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি টিসার্স (এগ্রিকালচার সায়েন্স) ‘তারেক রহমানের রাজনীতি ও কৃষি এবং পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, হাওর এলাকাগুলোতে আবারও বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। চালের দাম আবারো বাড়ছে। আপনারা (সরকার) বলেছিলেন বিনা পয়সায় সার দিবেন কৃষকদের। কিন্তু, তা না করে এখন আরও তিনগুণ বাড়িয়েছেন। ১০ টাকা কেজি চাল এখন ৬০ টাকা।
‘বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে’- সরকারের মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, লেকের পাশে স্টেজ তৈরি করে বুলেট প্রুফ মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে যখন বলা হয়, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। তখন ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করতে, কিসের উন্নয়ন? উন্নয়ন আপনাদের হয়েছে। গুটি কয়েক মানুষের উন্নয়ন। যারা শুধুমাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে একদিকে বিদ্যুৎ থেকে লুটছেন, অন্যদিকে মেগা প্রজেক্টের নামে ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেস ওয়ে করে নিচ্ছেন, কোনো লাভ হয় না। নাইজেরিয়া তার প্রমাণ।
প্রশাসনকে ধ্বংস করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের পছন্দমত লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশাসনকে যদি ধ্বংস করে দেয়া হয় তাহলে বাংলাদেশকে আপনি সফল রাষ্ট্র তৈরি করবেন কিভাবে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চুক্তি করেছেন ভালো কথা, কিন্তু আমরা পেলাম কি? সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে এসেছে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে চুক্তিতে আছে। কিন্তু আগে যারা এসেছে তাদের ব্যাপারে কিছু নেই। তাও আবার কখন থেকে ফেরত নেবে, কবে শেষ হবে সে ব্যাপারেও কিছু বলা হয় নি। জাতিসংঘসহ অন্যান্য দেশগুলোকে বাইরে রেখে চুক্তি সম্পাদন করে এসেছেন।
নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা বলছেন নির্বাচন আপনাদের অধীনে হবে। ধরে নিলাম, নির্বাচন করার জন্য ন্যূনতম অধিকার দেন। সবার আগে যেটা দরকার, একটা নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সবদল সমানভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে হতে হবে। নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং সেই নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে। তাদের যে রায় তা প্রমাণ করবে জনগণের সরকার।
উন্নয়ন ও কৃষি উন্নয়ন নামে সরকার ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে। কয়েদিন আগেও ১১ টন চাল আমদানি করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূন্ন হলে আবার আমদানি কেন? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ যে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছিল সেই ঝুড়ির তলা রিপেয়ার করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতায় আসার পর এগ্রিকালচার ক্রেডিটের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার ‘রুরাল ফিনান্সিং’ চালু করেছিলেন। সেদিন থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল।
কয়েকটি ফ্লাইওভার দিয়ে উন্নয়ন হয় না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানবসম্পদের উন্নয়ন না করলে প্রকৃত উন্নয়ন হয় না।
সেমিনারে কৃষি ও পল্লি উন্নয়নে তারেক রহমানের ভূমিকা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক তাসমেরী এস ইসলাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, অ্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক হাসান জাপির তুহিন, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান কায়সার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এএম/এসএইচ