রাজধানী একটি অভিজাত হোটেলে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যে এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, রাজনীতিতে নারীদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সময় দেখা হলো সচিব কারা হবেন। আমরা খুঁজে দেখে উঠিয়ে এনে ১০ জন নারীকে সচিব করেছি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৮১ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী ও কার্যনির্বাহী কমিটিতে প্রায় ৩৩ শতাংশ নারী রয়েছে। সংসদে আওয়ামী লীগ থেকে ৪২ জন নারী সদস্য সংরক্ষিত আসনে আর সরাসরি নির্বাচিত হয়ে ১৬ জন নারী সদস্য রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদে আছেন ৪ জন আর উপদেষ্টা আছেন ২জন নারী।
এইচটি ইমাম বলেন, মা-বোনের সমতা না হলে হবে না। তাই সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিজনিজ দলের ভেতরে নিজেদের অবস্থান থেকে নারী ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বর্তমান সংসদে মোট আসনের ২০ শতাংশে নারীরা রয়েছেন। এক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাদ দিয়ে সরাসরি নির্বাচিতদের অবস্থান দাঁড়ায় পাঁচ শতাংশ। মোট হিসাব করলে আমরা একটা অবস্থানে রয়েছি। তবে আসলে তেমন নয়।
তিনি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, পৃথিবীতে যত সংসদ সদস্য রয়েছেন, তার মধ্যে মাত্র ২১ দমমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে নারী। আমেরিকায় ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, বৃটেনে ৩২ শতাংশ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ, ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ৩৯ থেকে ৪০ শতাংশ এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে ৬০ শতাংশ নারী সংসদ সদস্য রয়েছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে ১৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে, তবে অবস্থার পরিবর্তনে ফলে পরবর্তীতে তা তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এটা আর হয়নি। বরং দিন দিন সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বেড়েছে। কাজেই নারীদের নিয়ে নয়, পুরুষদের নিয়েই এই আলোচনা করতে হবে। পরিবর্তন ঘটাতে হবে পুরুষদের মানসিকতার।
তিনি আরো বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের যে পদ্ধতি এটা বাতিল করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তৃণমূল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। এজন্য দলগুলোর গণতন্ত্র সংশোধন করা আবশ্যক। নারী-পুরুষের সমতা বিধান করতে আমাদের প্রত্যেক দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
নারীদের উদ্দেশ্যে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কেউ ক্ষমতা দেবে না। এটা আদায় করে নিতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংরক্ষিত আসন তুলে দিতে হবে। নারীরা তাদের যোগ্যতা দিয়েই এগিয়ে যাবে। যেখানে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র থাকবে না, সেখানে নারীদের জন্য কোনো স্পেসও থাকবে না। আমাদের দলে ১৩শতাংশ নারী রয়েছে। এটা পর্যাপ্ত নয়।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষ যত কাজ করে তার তিনের দুইভাগ নারীরা করেন। আর তিনের এক ভাগ কাজ করেন পুরুষরা। তাই নারীর উন্নয়ন না হলে দেশের উন্নয়ন হতে পারে না।
বৈঠকে দু’টি দলের শীর্ষ নারী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা দলগুলোর নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির দাবি তোলেন। একই সঙ্গে তারা সংরক্ষিত আসনের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ চান।
গোল টেবিল বৈঠকটি আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
**বাংলাদেশে গণতন্ত্রে সহিংসতার স্থান নেই
**‘মেয়েরা ঘরও গোছাতে পারেন, রাজনীতিও গোছাতে পারেন’
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
ইইউডি/এসএইচ