এ অবস্থায় নির্ধারিত তারিখেই সমাবেশের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তবে অনুমতি না মিললেও যে কোনো মূল্যে তারা এই সমাবেশ সফল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
কারণ বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের শাসনামলে এটিই বিএনপির কোনো বড় সমাবেশ। যেখানে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থাকবেন না। উল্টো তারই কারামুক্তির দাবি জানাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ফলে এক সময়ের বিএনপির দূর্গ বলে পরিচিত রাজশাহীতে এবার নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চায় মামলা, দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা সঙ্কটে থাকা দলটি।
আগামী ৩১ মার্চকে টার্গেট করে তাই বিএনপির সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। শীর্ষ নেতারা রাজশাহী মহানগরীসহ উত্তরাঞ্চলের ১০ সাংগঠনিক জেলায় সফর শুরু করেছেন।
এর মধ্যে গত ৮ মার্চ মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে দলটি। ওইদিন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে বিএনপির একটি দল মহানগর পুলিশ কমিশনারের হাতে সমাবেশের অনুমতির আবেদনপত্র তুলে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাদের কিছুই জানানো হয়নি। ফলে সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি এখনও।
তবে যে কোনো মূল্যে ওইদিন মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করা হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।
মিলন জানান, তারা পুরোদমে বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্ততি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে এ উপলক্ষে সভা করা হচ্ছে। এছাড়া শীর্ষ নেতারা জেলা পর্যায়েও সফর শুরু করেছেন। এরইমধ্যে সমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি হিসেবে গত ৯ মার্চ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় বিভাগের আট জেলাসহ ১০ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে যে কোনো মূল্যে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ করার সংকল্প প্রকাশ করা হয়। এজন্য জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও ব্যাপক প্রচার চালাতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানান, তারা নিয়ম মেনেই পুলিশ কমিশনারের হাতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র দিয়েছেন। আশা করছেন পুলিশ মাদ্রাসা মাঠে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেবে। তাই জনসভা সফল করতে এরইমধ্যে জেলা পর্যায়ে প্রচারাভিযান শুরু করেছেন তারা। গত ৯ মার্চ মহানগর বিএনপির প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। শনিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপির প্রস্তুতি সভা রয়েছে।
এদিকে সমাবেশ প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি কোনো নিষিদ্ধ দল নয় যে সমাবেশের অনুমতি পাবে না। তারা খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় সমাবেশ করতে চান। এখানে কারও উস্কানিতে তারা পা বাড়াবেন না। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করেছেন। তাই তারাও সমাবেশের অনুমতি পাবেন। এজন্য মাঠ পর্যায়ে সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে।
এ সমাবেশ ‘স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ’ হবে উল্লেখ করে রাজশাহীর সাবেক এই মেয়র বলেন, তিনি এরইমধ্যে উত্তরাঞ্চলের সবগুলো সাংগঠনিক জেলায় প্রচার শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে সমাবেশ সফল করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর সমাবেশ। তাই নেতাকর্মীরা সমাবেশকে কেন্দ্র করে আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন বলেও জানান মিনু।
এক প্রশ্নের জবাবে মিনু বলেন, রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গ হচ্ছে বিএনপির দুর্গ। তারা ৩১ মার্চের সামাবেশের মধ্যে দিয়ে তা আবারও প্রমাণ করে দেবেন। সমাবেশে দলের মহাসচিবসহ স্ট্যান্ডিং কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি প্রশ্নে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির আবেদন পাওয়া গেছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া দেশের অন্য বিভাগীয় শহরে যেমন সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজশাহীর ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
এসএস/আরআর