ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বাবুর জৌলুসপূর্ণ প্রচারণা, কারারুদ্ধ কালাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
বাবুর জৌলুসপূর্ণ প্রচারণা, কারারুদ্ধ কালাম

খুলনা: খুলনা-৬ আসনে চলছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আখতারুজ্জামান বাবুর (নৌকা) জৌলুসপূর্ণ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। তফসিল ঘোষণার পর তরুণ এ প্রার্থী প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চালাচ্ছেন গণসংযোগ। 

তার গণসংযোগ, মিছিলে হাজারো মানুষ। নারী, পুরুষ, তরুণ, যুবা ও বয়োবৃদ্ধ।

উচ্ছ্বাসে ভরা স্লোগান ‌‌‌‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা', শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার', 'বাবু ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন'।  

অপরদিকে, জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কয়রা-পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা মহানগর আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (ধানের শীষ) কারাবন্দি রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা নীরবে চালাচ্ছেন প্রচারণা। ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াত প্রার্থীর সমর্থকদের মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ আসনে বাবু ও কালাম দু’জনই নতুন প্রার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা-৬ আসনে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আখতারুজ্জামান বাবু। হাজার হাজার নেতাকর্মী তার প্রচার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-প্রেশার মানুষকে তার নির্বাচনী প্রচারণায় নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, রাস্তা-ঘাট, অলি-গলিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে।  

অপরদিকে, ধানের শীষের প্রার্থীর কোনো পোস্টার, লিফলেট কিংবা প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ৯০ দশকের সাবেক ছাত্র নেতারা ও বর্তমান ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা বাবুর পক্ষে ভোট চাইছেন।  

এ আসনটিতে মহাজোটের অংশ জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী রয়েছেন। খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যা বাবুর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

এদিকে, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা মাঠে নেই জামায়াত নেতার পক্ষে।  

খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান বাবু (নৌকা), জামায়াতের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের গাজী নূর আহমেদ (হাতপাখা), জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন (গোলাপ ফুল), কমিউনিস্ট পার্টির সুবাস চন্দ্র সাহা (কাস্তে) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির মির্জা গোলাম আজম (টেলিভিশন) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

এ আসনে ৭ জন প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে তুমুল লড়াই হবে। যদিও জামায়াতের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ কারাবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।  

খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, খুলনা-৬ আসনের পাইকগাছা উপজেলায় মোট ভোটার দুই লাখ ১৮ হাজার ৫৬৬ জন আর কয়রা উপজেলায় মোট ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ জন।

জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে খুলনা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা স ম বাবর আলী। ১৯৭৯ সালে বিএনপি নেতা শেখ রাজ্জাক আলী এবং ৮৬’র নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শেখ মো. নুরুল হক, ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব আলী সানা এক লাখ ৩১ হাজার ২১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপি জোটের প্রার্থী জামায়াতের শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস পেয়েছিলেন এক লাখ ১৬ হাজার ১৬০ ভোট। ২০১৪ সালে এই আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন শেখ মো. নূরুল হক।

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) আবুল কালাম আজাদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ লিয়াকত আলী সরদার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। মিথ্যা-গায়েবি মামলা নিয়ে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। সোমবারও (১৭ ডিসেম্বর) ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধানের শীষে প্রচার-প্রচারণায় নামলে আমাদের লোকজনদের ধাওয়া দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করতে পারছি না। প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রার্থী জেলে থাকায় তার সমর্থকরা প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।  

তিনি বলেন, আবুল কালাম আজাদ সব মামলায় জামিনে থাকার পরও গত ২৭ অক্টোবর ঢাকা যাওয়ার পথে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইসময় তাকে দু’টি পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আবার এই মুহূর্তে আবার একটি পেন্ডিং মামলায় আসামি করা হয়েছে।  

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের নির্বাচনী কার্যক্রম মনিটরিং কমিটির সমন্বয়ক মো. আবু সাঈদ খান বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত হচ্ছে, নিবন্ধন বাতিল ও ফ্যাসিবাদী একটি সংগঠন। শেখ হাসিনার পুঁজি হচ্ছে উন্নয়ন। আর বিএনপি-জামায়াতের পুঁজি মিথ্যাচার। উন্নয়নের জোয়ারে বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যার রাজনীতি দেশ থেকে চিরতরে বিলিন হয়ে যাবে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করছে জামায়াত। মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। চোখ-কান খোলা রেখে সব অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
এমআরএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।