শুক্রবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে যে উদ্যোগ-সহায়তা নেওয়ার কথা সেটা দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ত্রাণমন্ত্রী কোথাও ঘুরে আসেননি। সরকারের পদক্ষেপগুলো মানুষ দেখতে চায়। আপনারা পত্রিকায় কি ছবি দেখছেন যে, কোনো মন্ত্রী এলাকায় গেছেন বা বন্যাকবলিত এলাকায় হেলিকপ্টার মুভ করেছে। দেখেননি। অর্থাৎ, সরকারের যে জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই সেটা বোঝা যায়।
এখানে বিরোধীদলের তেমন কিছু করার নেই। তারা ত্রাণ কমিটি পাঠাতে পারে, সেখানে কিছু কিছু সাহায্য নিয়ে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব বন্যাকবলিত মানুষকে রক্ষা করা। যেটা সরকার করছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বৈঠকে দলের ২১ সদস্যের একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সদস্য সচিব ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াসীন। কমিটিতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট জেলার নেতারাও থাকবেন।
এই ত্রাণ কমিটি অবিলম্বে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টা থেকে দুই ঘণ্টা স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, দেশে আজ ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। আদালতের ভেতরে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, ছোট্ট শিশুর মাথা কেটে ফেলা হচ্ছে, প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হচ্ছে এবং তার পরবর্তীতে যে ঘটনাগুলো ঘটছে যেমন, একজন প্রধান আসামি (০০৭ নয়ন বন্ড) তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলো। দেখা গেলো সেই মামলার যে বাদী (আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি) তাকে আবার গ্রেফতার করা হলো এবং তাকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন ও বিচার বিভাগে একটা নৈরাজ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে সুব্রত বাইন পরিচয় দিয়ে গুম করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলো কিন্তু অহরহ ঘটছে। অনেক মানুষই ভিকটিম হচ্ছেন বিশেষ করে তুলে নিয়ে যাওয়া- এটা তো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ফখরুল বলেন, আমরা মনে করছি যে, এ বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে হলে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা প্রয়োজন। আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করছি এবং বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি ডেঙ্গুর ভয়ে অফিসে যাচ্ছেন না, মশা কামড়াতে পারে। একবার তার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। অথচ একজন মেয়র বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত নানি কিছুই হয়নি। এখন পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছেন, কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সবাই এখন দিনে শিশুদের মশারির নিচে রাখছেন, বড়রা মোজা পরে থাকেন কখন এডিস মশা কামড় দেবে সেই ভয়ে। সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। আমি নিজে উত্তরায় থাকি, এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি।
বৈঠকে মহাসচিব ছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও লন্ডন থেকে স্কাইপেতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
এমএইচ/এএ