জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গত ৩ জুন ভেঙে দেওয়া হয় দলের সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দীর্ঘ পাঁচ বছর স্থায়ী কেন্দ্রীয় সংসদ। এরপর গত ২৩ জুন সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর প্রায় দুই মাস হতে চললেও নতুন কমিটি গঠন করতে না পারায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যেমন হতাশার মধ্যে আছেন, তেমনি বিএনপির নেতারাও পড়েছেন বেকাদায়।
জানতে চাইলে দলের একজন সিনিয়র নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে যে ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তাতে শিগগিরই কমিটি করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি হয়ে যাবে। বড় দলের মধ্যে এ ধরনের ছোটখাটো সমস্যা হয়েই থাকে। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।
জানা যায়, নতুন নিয়মে যারা কাউন্সিলের পক্ষে তারা ছুটছেন ভোটারদের কাছে। অন্যদিকে নতুন আইনের প্যাঁচে যারা কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারছেন না তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি কিছুদিনের জন্য হলেও একটি আহ্বায়ক কমিটি করে তাদের একটা পথ করে দেওয়া হোক। ইতোমধ্যে তারা কয়েকবার নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ও বিক্ষোভ করে তাদের দাবি জানিয়েছেন। এমনকী কয়েকদিন অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন। দাবি না মানলে পুনরায় এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা।
নির্বাচনে বিবাহিত কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের ২০০০ সালের মধ্যে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ ধরনের আইনের বিরুদ্ধে বিলুপ্ত কমিটির নেতারা মূলত আন্দোলন করছেন। তারা দাবি করেন আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। পাঁচ বছর আগে গঠিত কমিটির মেয়াদ তিন বছর আগেই শেষ হয়েছে। তখন নতুন কমিটি না করে এখন হঠাৎ করে নতুন আইন জারি করায় স্বাভাবিক কারণেই আমাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। আমরা বলেছি একটি আহ্বায়ক কমিটি করে তাদের ওপর কাউন্সিল করার দায়িত্ব দিলেও সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবেচনায় নিলেও কে বা কারা তাকে ভুল বুঝিয়েছেন। ফলে এখনও জটিলতা কাটেনি। তবে আশা করি দলের স্বার্থে সবাই আমাদের দাবির প্রতি একমত হবেন।
এদিকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল তারাও ছাত্রদলের সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে সবশেষ (২৬ জুলাই) খবর পর্যন্ত কোনো রকমের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
জানতে চাইলে, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় ’৭৯ সালে ছাত্রদল গঠিত হওয়ার পর প্রায় একযুগ ছাত্রদলের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে হয়েছে। ৯০ এর দশকে সেই ব্যবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হয়ে যায়। এবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পুরনো সেই নিয়মে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চেয়েছেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতির কারণে যেহেতু গত পাঁচ বছর ধারাবাহিক কমিটি হয়নি সেকারণে দলের ছেলেরা ধারাবাহিক কমিটির দাবি করেছে।
সবমিলিয়ে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবণতির মুখে আমরা ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমাদের সঙ্গে ছাত্রদল-যুবদলও ত্রাণ নিয়ে ব্যস্ত। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা আবার ছাত্রদল নিয়ে বসবো। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি কমিটি হবে।
ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে আন্দোলনরতদের এক নেতা বলেন, স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আমাদের দাবি জানিয়েছি। ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে দল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটাই থাকবে। কিন্তু কাউন্সিল উপলক্ষে আমাদের দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। এই কমিটি কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন করবে।
কাউন্সিলে যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘোষিত তারিখে কাউন্সিল না হওয়ায় তারা হতাশ। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই কমিটি থাকায় একটি গ্যাপের সৃষ্টি হয়েছে। তাই যারা আন্দোলন করছেন তাদের দাবিতেও যুক্তি আছে। সুতরাং, হাইকমান্ড তাদের দাবি মেনে নিয়ে স্বল্পসময়ের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দিলে সমস্যার সমাধান হয়।
ছাত্রদলের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির সবচেয়ে শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে যে জটিলতার সৃস্টি হয়েছে আশাকরি তা শিগগিরই কেটে যাবে। উভয়পক্ষ সম্মানজনক অবস্থানে থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি কমিটি উপহার দেবে।
তিনি বলেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। ২০১৪-১৫ সালে রাজপথের আন্দোলনে বারবার ছাত্রলীগ ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কয়েকবার কারাবরণও করতে হয়েছে। আশাকরি কাউন্সিলররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন বেগবান করবো। একই সঙ্গে কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৯
এমএইচ/এএ