বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তো আমার কাছে পরিষ্কার যে, এখানে প্রধানমন্ত্রী সত্য কথা বলেননি।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী শিল্পী শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করে অত্যাচার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিবিসি বাংলা বিভাগে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি শ্রেণী হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা অসাংবিধানিক সরকার, জরুরি অবস্থা অথবা মার্শাল ‘ল বা মিলিটারি রুলার এলে তাদের খুব দাম বাড়ে। কাজেই তারা সারাক্ষণ খুঁটি-নাটি বিষয় নিয়ে আমাদের পেছনে লেগে আছে।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই লক্ষ্য করেছি যে, সরকারের প্রকৃত পক্ষে জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি, জোর করে এসেছে। সেজন্য তারা যা কিছু বলতে পারে, একটা দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব পালন করার কথা সেটা তারা করবেন না-এটাই তো স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, আমিতো প্রথমেই বলেছিলাম, আসলে অবিলম্বে এটাকে আপদকালীন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা বলেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ডেঙ্গু মোকাবিলায় দলীয় রাজনীতিকে বাদ দিয়ে, জনগণের কল্যাণের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত। সেটা তো কখনো হয়নি এখানে। ‘যতগুলো জাতীয় সমস্যা এসেছে, কোনো সমস্যাতে আওয়ামী লীগ অন্যান্য দলকে সম্পৃক্ত করেনি এবং তারা বিশ্বাসই করে না। তারা একা চলা নীতিতে বিশ্বাস করে। সে কারণে তাদের বড় ধরনের ভুল হতে থাকে, ত্রুটি হতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিডিয়ার কারণে ডেঙ্গু সমস্যা নিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, উনারা সবসময়ই জিনিসগুলোকে অ্যাভোয়েট করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, এখন ডেঙ্গু নিয়ে যে নাটক চলছে, ফটো সেশন চলছে। আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব নিজেই ঝাড়ু-টাড়ু নিয়ে ঝাড়ু দিলেন। আবার উনি বলছেন যে, ফটো সেশন করা চলবে না। ইট ইজ ভেরি ইন্টারেস্টিং। আমরা সাধারণ মানুষ এগুলো দেখছি।
এবি সিদ্দিকীর দায়েরকৃত মামলার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, এটাতে আমরা বিম্মিত হয়েছি-ইটস বোল্ড ফরম ব্লু। আসলে এ ধরনের ঘটনায় মামলা হবে আমরা চিন্তাই করতে পারিনি। মামলাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা-বানোয়াট। আমার কাছে মামলার কপি আছে। এখানে সাম এবি সিদ্দিকী, তাকে আমি কোনোদিনও দেখিনি। যদিও তিনি ইতিপূর্বে ৩/৪টা মামলা করেছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও পাঁচটি মামলা করেছেন। তিনি (এবি সিদ্দিকী) কী জননেত্রী পরিষদের স্বঘোষিত সভাপতি এবং তার কাজই হচ্ছে এ ধরনের মামলাগুলো করা।
এ মামলায় দেখলাম ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে। দ্যা ওয়াজ সারপ্রাইজিং। এর আগে যেসব মামলা হয়েছে সেটাতে থানার কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার (আদালত) কনগিজেনসে নেয়নি। এই প্রথম দেখলাম যে, মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেলো। মামলার কাগজে আমাদের নাম কোথাও নেই। আমি বিস্মিত হয়েছি যে, সেক্ষেত্রে আদালত আমাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টে গেছি। হাইকোর্টও-এটাকে সেইভাবে না দেখে আমাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সব সময় যেটা মনে করি যে, এ ধরনের মিথ্যা মামলা তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক কার্যক্রমগুলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
ওই মামলাটি (এবি সিদ্দিকী) সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরা বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি।
সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার মতো বিএনপি চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না- এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বক্ষেত্রে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, তাহলে সরকারই উস্কানি দিচ্ছে ভিন্ন পথে যাওয়ার। যেটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য কখনোই ভালো নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
এমএইচ/আরআইএস/