ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে চাই না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে চাই না বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছেন লেখক ভট্টাচার্য/ছবি: শাকিল

বিতর্কের মুখে নজিরবিহীনভাবে একসঙ্গে পদ হারিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন লেখক ভট্টাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এ গ্র্যাজুয়েট ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেলেও কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি সময়ের জন্য সব সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

আগামী সম্মেলনের আয়োজন, ছাত্রলীগ নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা, অভিযুক্তদের নিয়ে সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে এসেছে ছাত্রলীগের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার ইতিহাসও।

বলেছেন, ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে চান না। যদি কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ছাত্রলীগে যোগ্যদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানিয়েছেন লেখক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট সাজ্জাদুল কবির। পাঠকের জন্য তার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো।

বাংলানিউজ: আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন?

লেখক ভট্টাচার্য: আমি গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০০৬ সালে গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেই। ২০০৮ সালে যাশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হই। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮-০৯ সেশনে সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা বিভাগে ভর্তি হই। কোনো ধরনের শিক্ষাবর্ষ গ্যাপ ছাড়া স্নাতকত্তোর সম্পন্ন করি। বর্তমানে আইডিয়াল ল কলেজে অধ্যয়ন করছি।
বাংলানিউজ: ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কীভাবে এসেছেন?

লেখক ভট্টাচার্য: ছোটবেলা থেকে আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হই। ২০০৯ সালে হলে আসি। ২০১৩ সালে হল কমিটি হয়। এর আগে হলে কোনো কমিটি ছিল না। তখন হলে আমি সহ-সভাপতি হই। এরপর ইউনিভার্সিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হই।

বাংলানিউজ: বিশেষ প্রেক্ষাপটে আপনি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসীন হলেন। সংগঠনের জন্য আপনার পরিকল্পনায় কোন কোন দিক বেশি প্রাধান্য পাবে?

লেখক ভট্টা‌চার্য: আমাদের বর্তমান কমিটি দশ মাস বাকি থাকতে আমরা দায়িত্বটা পেয়েছি। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য- সফল সম্মেলন আয়োজন করা। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে সম্মেলন হয়ে গেছে। কিন্তু কমিটি হয়নি। আমরা প্রথমে এগুলি দিয়ে শুরু করবো। সামনে কিছু সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলো ঘোষণা করবো। সব ইউনিটে সম্মেলন করার পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করবো।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছেন লেখক ভট্টাচার্য।

বাংলানিউজ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন?

লেখক ভট্টাচার্য: ইসলামী ইউনিভার্সিটির যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষর করে কমিটি দিয়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আমরা প্রথমে আপার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলে কর্মী সম্মেলন করবো। তারপর যেসব ক্যাম্পাসে ঝামেলা হচ্ছে সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।

বাংলানিউজ: ছাত্রলীগকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

লেখক ভট্টাচার্য: অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা আছে। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে আমাদের একটি বড় পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইনোভেটিভ বা উদ্ভাবনী কর্মসূচি নেবো। নিজেরা বসে একটি ফরম্যাট তৈরি করবো। তারপর এ সম্পর্কে ঘোষণা দেবো।

বাংলানিউজ: নেতাকর্মীদের অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের দপ্তর সেলের কার্যকাক্রমে কোনো ধরণের সমন্বয় নেই। দপ্তর সেল নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

লেখক ভট্টাচার্য: দপ্তর সম্পাদকের কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল। আমরা দপ্তর ও উপদপ্তর সম্পাদকদের নিয়ে বসে এ বিষয়টি সমন্বয় করে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবো।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছেন লেখক ভট্টাচার্য।
বাংলানিউজ: ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মাদক, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সাধারণ ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। আপনি এসব বন্ধে কী ধরনের উদ্যোগ নেবেন?

লেখক ভট্টাচার্য: ছাত্রলীগের রানিং কোনো কর্মী বা নেতার বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসে তবে প্রমাণসাপেক্ষে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

বাংলানিউজ: অন্য ছাত্রসংগঠনের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে?

লেখক ভট্টাচার্য: যারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে এবং সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে তাদের ব্যাপারে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

বাংলানিউজ: ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের প্রটোকলের কারণে জনদুর্ভোগের অভিযোগ উঠেছিল নাগরিকদের কাছ থেকে। আপনাদের বেলায় এরকম হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে?

লেখক ভট্টাচার্য: আমরা ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে চাই না। আমরা সভাপতি-সম্পাদক একসঙ্গে মধুতে আসি। যাওয়ার সময়ও আমরা এক বাইকে চলে আসি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এই সমস্যা যাতে না হয়।

বাংলানিউজ: অভিযুক্তদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন?

লেখক ভট্টাচার্য: ১৯ জনের পদ শূন্য করা হয়েছে। নতুন করে ৭২ জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছে। সংগঠনের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে বিতর্কিতদের নিয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবো। তারপর তাদের নাম প্রকাশ করবো ও যোগ্যদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯ 
এসকেবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।