মঙ্গলবার (১২ মে) অনলাইনে অনুষ্ঠিত সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন মো. কিবরিয়া এবং প্রতিবেদন পেশ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম। এছাড়া, করোনা মোকাবিলায় সিপিবি ও গণসংগঠনগুলোর উদ্যোগ ও কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও কোভিড-১৯ রেসপন্স টিমের সমন্বয়ক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন।
সভায় বক্তব্য রাখেন লীনা চক্রবর্তী, অধ্যাপক ডা. এম এ সাঈদ, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার, মাহবুবুল আলম, মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন, অধ্যাপক এম এম আকাশ, মৃণাল চৌধুরী, আজহারুল ইসলাম আরজু, অ্যাড. মণ্টু ঘোষ, এনামুল হক, ডা. দিবালোক সিংহ, অধ্যাপিকা এ এন রাশেদা, এমদাদুল হক মিল্লাত, মনিরা বেগম অনু, ডা. ফজলুর রহমান, শাহরিয়ার মো. ফিরোজ, ইসমাইল হোসেন, মাকসুদা আক্তার লাইলি, কাজী রুহুল আমিন, সাদেকুর রহমান শামীম, এস এ রশীদ, রাগিব আহসান মুন্না, ডা. মনোজ দাশ, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, হাসান তারিক চৌধুরী, আমিনুল ফরিদ, মো. কিবরিয়া, লুনা নূর, আনোয়ার হোসেন সুমন, আনোয়ার হোসেন রেজা, পরেশ কর, আবিদ হোসেন, অ্যাড. আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, আসলাম খান, অ্যাড. মহসিন রেজা, হাফিজুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন খান প্রমুখ।
সভায় সিপিবি নেতারা বলেন, ‘সংকট আড়াল করতে চাইছে সরকার। বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের মতামত এখন সরকারের কাছে গুরুত্বহীন। দানবীয় শক্তি সক্রিয়ভাবে লুটপাটে নেমে পড়ছে। করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার পাশাপাশি চলছে লুটপাট। সরকারের দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা, সমন্বয়হীনতা, অমনোযোগিতা, অদূরদর্শীতার কারণে জনগণ এখন চরম হুমকির মধ্যে। ’
নেতারা বলেন, ‘বর্তমানে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার মারাত্মক অপ্রতুলতা রয়েছে। সমন্বয়হীনতা, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা-ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা রয়েছে। প্রয়োজন মতো করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা এখনো গড়ে তোলা হয়নি। অন্য সাধারণ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চরম ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার উদাসীন। ’
সভার প্রস্তাবে বলা হয়, কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে চলমান করোনা ভাইরাস মহাসংকটে সহযোগিতামূলক সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হলেও, সরকার কোনো সাড়া দেয়নি। কার্যকর লকডাউন নিশ্চিত করতে নিরন্ন মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটেনি। একেবারেই অপ্রস্তুত অবস্থায় গার্মেন্টস খুলে দিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ ছাড়াই মার্কেট, ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট, শপিংমল খুলে দেওয়া হয়েছে। মালিকের মুনাফার স্বার্থ ও চাপে, আমলাতন্ত্রের দাবি-পরামর্শ ইত্যাদির ওপরে নির্ভর করে সরকার বিপদজনক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৪০ শতাংশ বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য বরাদ্দ সহায়তা-অনুদান লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। দুই কোটি পরিবারের সাহায্যের প্রয়োজন হলেও, মাত্র ৫০ লাখ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।
সভার প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জনগণের মধ্যে তুলে ধরা। লুটপাটের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লুটপাটের বিরুদ্ধে লেখা ও সরকারের সমালোচনা করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ মামলা করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, মিনহাজ মান্নানকে বাড়ি থেকে তুলে এনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ মামলা দেওয়া হয়েছে। এর আগে ৫৪ দিন নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ‘উদ্ধার’ হওয়ার পর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ মামলা করা হয়েছে। অবিলম্বে নিপীড়নমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিল এবং এ আইনে গ্রেপ্তারদের মুক্তি দাবি করেন সিপিবি নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২০
আরকেআর/এফএম