ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুর্নীতির বহুদৈত্যকার কেলেঙ্কারির কথা যেন মানুষ জানতে না পারে সে জন্য মুক্ত চিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। শাসকের বিরোধীতা করার অর্থ রাষ্ট্রের বিরোধীতা করা নয়, আর এজন্য নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ড্রাকোনিয়ান আইন প্রয়োগ করা গুরুতর অন্যায়।
বুধবার (৮জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যাল থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যে মানুষ যখন ভীত ও উদ্বিগ্ন, সে সময়ও মানুষের মুখ বন্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হিড়িক চলছে। বর্তমান নিপীড়নমূলক এই মামলা দেশের ইতিহাসের আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করছে। কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করায় গত তিন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্কুলের শিক্ষার্থী, নারীসহ প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ভালুকার ১০ম শ্রেণির এক কিশোর শিক্ষার্থীও রয়েছে। মানিকগঞ্জের বিএনপি নেতার মেয়ে মাহমুদা পলিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কয়েক মাস ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এই করোনার দুর্যোগকালে জালিম শাহীর হিংস্র আঁচড়ে দেশবাসী জর্জর। দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব একটা পরিমার্গ আছে, সেটি হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সহ্য না করা। তাদের ঐতিহ্যই হচ্ছে ছলেবলে কৌশলে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের আলোকে কেড়ে নিয়ে নিজেদের দলীয় শাসনকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা। এখানে ভিন্ন দল ও মতের অস্তিত্বকে তারা কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারে না। তারা মনে করে আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্র অভিন্ন একটি সত্তা। তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই তারা মনে করে দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা। দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি বলে মনে করে তারা।
রিজভী বলেন, আজকে কোটি কোটি মানুষ বেকার। সুদে টাকা নিয়ে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। আর সরকারের মুখে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। যাদের জন্ম ঢাকায় তারাও এখন গ্রামে পাড়ি দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা উপার্জন বন্ধ থাকায় বৌ-বাচ্চাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে মন্ত্রীরা বলছেন- বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে গেছে। সেই উন্নয়ন গেল কোথায়? এই চালের মৌসুমেও মোটা চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং শাক-সবজির দাম সম্পূর্ণভাবে স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষ অভুক্ত। তারা বিনা চিকিৎসায় ভুগছে। মানুষের ঘরে এখন খাদ্য নেই, চিকিৎসার সামর্থ্য নেই। ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ ঢাকা ছেড়ে দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে ঢাকার বাড়িওয়ালারাও। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন আর জনগণের কাছে নেই। তা পুলিশের কাছে চলে গেছে বলেই বর্তমান ভয়াল দুর্যোগে সরকার বর্বর অহমিকায় ভুগছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২০
এমএইচ/এইচজে