ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ঢাকার দুই আসনে ছাড় দেবে না বিএনপি

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
ঢাকার দুই আসনে ছাড় দেবে না বিএনপি নবী উল্লাহ নবী, কাজী আবুল বাশার, এসএম জাহাঙ্গীর ও কফিল উদ্দিন

ঢাকা: ঢাকা মহানগরের ১৮টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসন দুটি গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন দুটির সংসদ সদস্যরা মারা যাওয়ার কারণে শিগগিরই উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে।

এরই মধ্যে বড় দুটি দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন ছেড়ে দিলেও ঢাকার এই আসন দুটিতে তারা ছাড় দেবে না। পুরো প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে থাকবে দলটি।

আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন ও হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে সোমবার (২০ জুলাই) এমনটি জানা গেছে। সেক্ষেত্রে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ওই আসন দুটিতে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই আসন দুটিতে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এ লক্ষ্যে দুই আসনে সম্ভাব্য চারজন প্রার্থীকে তারা মাঠে কাজ করতে বলেছে।

ইতোমধ্যে ওই প্রার্থীরা মাঠে কাজও শুরু করেছেন। এলাকাভিত্তিক সাধারণ জনগণের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। করোনাকালে বিভিন্ন রকমের সহযোগিতা করছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে নির্বাচনী কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনও শুরু করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-৫ আসনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী ও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশারকে মাঠে কাজ করতে বলা হয়েছে। এদের দুজনের মধ্যে যে কোনো একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

অপরদিকে ঢাকা-১৮ আসনে একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। সে সময় বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ছিল যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবেক ছাত্র নেতা এসএম জাহাঙ্গীরকে। কিন্তু জোটের কারণে জাহাঙ্গীর মনোনয়ন পাননি। এবার তাকে মাঠে কাজ করতে বলা হয়েছে।  

অপর দিকে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কফিল উদ্দিনকেও মাঠে কাজ করতে বলেছে হাই কমান্ড। সেক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর অথবা কফিল উদ্দিনের মধ্যে যে কোনো একজন এই আসনে মনোনয়ন পাবেন।

প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। সবাই বলছেন, হাই কমান্ড মনোনয়ন দিলে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।

কফিল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি উত্তরার আদি বাসিন্দা। টঙ্গী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি ছিলাম। উত্তরা থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও অভিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে আমি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন ব্যবসায়ী। এফবিসিসিআই, বিজিএমইএর সদস্য। নতুন সংগঠন অটো ব্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।

তিনি বলেন, উত্তরায় দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি। এখানের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। আশা করি সবকিছু বিবেচনায় দল মনোনয়ন দেবে।

ঢাকা-১৮ আসনের অপর প্রার্থী মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মহানগরের সকল কর্মসূচিতে আমার অংশগ্রহণ থাকে। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর বিএনপির জন্য ব্যয় করেছি। সাতটি থানা নিয়ে ঢাকা-১৮ আসন গঠিত। এখানে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ভোটার। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। যেটা আমি বছরব্যাপি করে থাকি। সারাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে এই আসনে বিএনপি অনেক বেশি সংগঠিত।

তিনি বলেন, সরকারি দলের পক্ষ থেকে এই আসনের উপ-নির্বাচনে বিগত দিনের মতো অপকর্ম করার চেষ্টা করা হলে দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে ধানের শীষ বিজয়ী হবে।

ঢাকা-৫ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী নবী উল্লা নবী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারির মধ্যে হুট করে নির্বাচন দেওয়াটা আমি সঠিক মনে করি না। ঢাকা-৫ আসনটি অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ। এখানে এই মহামারির মধ্যে নির্বাচন দিলে আরও সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। তারপরও যদি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে আর বিএনপির হাই কমান্ড থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমি প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করছি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা করোনাকালে এমনিতেই মাঠে আছে। জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।

এই আসনের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, আমি অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে দীর্ঘ ১৮ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছি। ঢাকায় যখন ৫০টি ওয়ার্ড ছিল তখন আমি ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। দীর্ঘদিন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছি। ৪০ বছর বিএনপির রাজনীতি করি। দল যদি আমাকে ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন দেয়, আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। আর দল আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে তার সঙ্গেও আমি মাঠে থাকবো। ধানের শীষের রাজনীতি করি। হাই কমান্ড যাকে ধানের শীষ দেবে তিনিই আমাদের প্রার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বগুড়া-১ আর যশোর-৬ আসনে নির্বাচন বর্জন করলেও ঢাকার আসন দুটিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। কারণ এই আসন দুটির একটি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার অপরটি চট্টগ্রামসহ দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার। সুতরাং এই আসন দুটিতে জয়লাভের জন্য শক্ত প্রার্থী দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।